আন্তর্জাতিক

দ্বিতীয় দফা করোনায় বিপর্যস্ত ইউরোপ, স্পেনে রাতে কার্ফু

দ্বিতীয় দফা করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ইউরোপের দেশগুলো। করোনার বিস্তার রোধে স্পেনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে রাত্রিকালীন কার্ফু।
Spain corona
করোনার বিস্তার রোধে স্পেনে রাত্রিকালীন কার্ফু দেওয়া হয়েছে। ২৬ অক্টোবর, ২০২০। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় দফা করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ইউরোপের দেশগুলো। করোনার বিস্তার রোধে স্পেনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে রাত্রিকালীন কার্ফু।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদরো সানশেজ গতকাল রোববার রাত্রিকালীন কার্ফুর ঘোষণা দেন। দেশটিতে রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্ফু বলবৎ থাকবে।

আজ সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, জরুরি অবস্থার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সানশেজ দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে চলাচল নিষিদ্ধ করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে আগামী ১৫ দিন থাকবে। এটি বাড়িয়ে ছয় মাস পর্যন্ত বলবৎ রাখার জন্যে তিনি পার্লামেন্টকে অনুরোধ করবেন বলেও জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় দফা করোনা মোকাবিলায় ইতালিও গতকাল নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশটির সরকার বলেছে, নতুন করে সংক্রমিত হওয়ায় ইতালির স্বাস্থ্যসেবার ওপর অনেক চাপ পড়েছে।

ইউরোপের পর্যটনসমৃদ্ধ এই দেশটিতে সিনেমা হল, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম আজ সোমবার থেকে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রেস্তোরাঁ, বার ও ক্যাফের ভেতরে খাবার সরবরাহ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে দোকানপাট খোলা থাকবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিউসেপে কোনতে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি এই মাসটি আমাদের খানিকটা ভোগাবে। তবে আমরা যদি কষ্ট করে নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনে চলি তাহলে আগামী ডিসেম্বরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করি।’

দেশটিতে প্রথম দফা করোনা সংক্রমণের সময় মার্চ ও এপ্রিলে দেশব্যাপী লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে এবার তিনি লকডাউন দিতে চান না বলেও সংবাদিকদের জানান।

নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে স্কুলগুলো বন্ধ থাকবে এবং ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হবে।

গতকাল ইতালিতে ২১ হাজার ২০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একদিনে শনাক্ত সংখ্যার হিসাবে এটি একটি রেকর্ড। একই দিনে মারা গেছেন ১২৮ জন।

এমন পরিস্থিতিতে ইতালি সরকারের নেওয়া নতুন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে গত সপ্তাহে নেপলস ও রোমে বিক্ষোভ হয়েছে।

এদিকে, ফ্রান্সে প্রতিদিনই রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গতকাল ৫২ হাজার ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গত শনিবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনেই বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন তথ্যে বলা হয়, গতকাল তৃতীয় দিনের মতো রেকর্ড সংখ্যক ইউরোপীয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল শনাক্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩১৯ জন।

গতকাল যুক্তরাজ্যে রেকর্ড ১৯ হাজার ৭৯০ জন করোনায় আক্রান্ত হন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইউরোপে সবচেয়ে বেশ মানুষ মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে মারা গেছেন ৪৪ হাজার ৯৮৬ জন।

বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বইকো বরিসোভ তার করোনায় আক্রান্তের সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। তিনি সেলফ আইজোলেশনে আছেন বলেও জানিয়েছেন।

গত শনিবার চেক প্রজাতন্ত্রে একদিনে ১২ হাজার ৪৭২ জন আক্রান্ত হওয়ায় নতুন করে লকডাউন দিয়েছে দেশটির সরকার। সেটি ছিল একদিনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

নেদারল্যান্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ২০৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন ব্যবস্থা হিসেবে দেশটিতে বার ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে।

হপকিনসের হিসাবে রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৩ হাজার ৬৫২ জন এবং মারা গেছেন ২৫ হাজার ৮৭৫ জন। আক্রান্তের বিবেচনায় বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের শহর মস্কোর মেয়র গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে।’

সম্প্রতি, জার্মানিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা অফিস রবার্ট কোশ ইনস্টিটিউটের একটি ভবনে ভাঙচুর করা হয়েছে। ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

সুইজাল্যান্ডের জেনেভা শহরের হাসপাতালগুলোতে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের ডাকা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে সেখানে করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English
BNP office in Nayapaltan

Column by Mahfuz Anam: Has BNP served its supporters well?

The BNP failed to reap anything effective from the huge public support that it was able to garner late last year.

12h ago