কাতারে ফেরার অপেক্ষায় ছুটিতে আসা বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক

কাতারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কয়েক শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারছেন না দেশটির অনুমতি না পেয়ে। করোনা মহামারির কারণে তাদের অনেকের কাতারে প্রবেশের অনলাইন আবেদন বাতিল করা হয়েছে এবং অনেকের আবেদন অযথাই দীর্ঘদিন যাবত প্রক্রিয়াধীন রাখা হয়েছে।

অভিবাসী শ্রমিকরা জানান, কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার আগে তারা ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। বৈধ ভিসা এবং আবাসনের অনুমতিপত্র, যা কাতারের আইডি কার্ড নামে পরিচিত, তা তাদের রয়েছে।

চাকরি ছাড়া কয়েক মাস ধরে বাড়িতে বসে থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা।

যথাযথ নিয়ম মেনে কাতারে তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করেও এই সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না তারা।

গত ১১ অক্টোবর ছুটিতে দেশে আসা কাতার অভিবাসী শতাধিক শ্রমিক ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মোহাম্মদ আল ওসমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে আশ্বাস দিয়েছেন যে অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ‘বিকল্প অনুমতিপত্র’ দেওয়া হবে।

মহামারির কারণে কাতারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশটিতে যেতে গত ১ আগস্ট থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হচ্ছে।

কাতার সরকারের একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কাতার পোর্টাল ব্যবহার করে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী শ্রমিকের প্রবেশের জন্য আবেদন করতে হবে।

যোগাযোগ করা হলে, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি মনসুর আহমেদ কালাম জানান, প্রায় চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার বাংলাদেশি টিকিট কেটে কাতারে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।

তাদের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুনরায় প্রবেশের অনুমতি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবে, কতজনের এই সমস্যা হচ্ছে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

দোহারে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে কাতার কর্তৃপক্ষের কাছে আটকে পড়া শ্রমিকদের একটি তালিকা জমা দিয়েছে।

দোহারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মিরাজ হোসেন জানান, তিনি দুই মাসের ছুটিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন। গত ১ এপ্রিল কাতারে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার।

দুমাসের ছুটির পরও তার কাতারের বাইরে আরও চার মাস থাকার অনুমতি ছিল। তার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গত আগস্টে পুনরায় তাকে কাতারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে।

ঢাকার বাসিন্দা মিরাজ বলেন, ‘আবেদনটি গৃহীত হয়নি।’ সেপ্টেম্বরে পুনরায় আবেদন করা হলে তাও বাতিল করা হয়।

কাতারে একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন মো. আব্দুল্লাহ (২৯)। তিনিও একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।

সিলেটের কানাইঘাটের এই অভিবাসী শ্রমিক জানান, ৪৫ দিনের ছুটিতে তিনি গত ৫ মার্চ দেশে আসেন। তার নিয়োগকর্তা জুলাইয়ে তাকে পুনরায় কাতারে প্রবেশের অনুমতির আবেদন করলে তাৎক্ষণিকভাবে তা বাতিল করা হয়েছিল।

আবদুল্লাহ জানান, তার নিয়োগকর্তা আগস্টে পুনরায় আবেদন করেন। তবে কাতার পোর্টাল ওয়েবসাইটটি এখনও তার আবেদন ‘প্রক্রিয়াধীন’ দেখাচ্ছ।

তিনি বলেন, ‘আমি বাড়িতে বেকার বসে ছিলাম। পরিবারের খরচ মেটাতে আমাদের দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি করতে হয়েছে।’

মানববন্ধনে অভিবাসী শ্রমিকদের দাবি ছিল, তাদের বিষয়টি সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত এবং এর তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য কাতারের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

দূতাবাসের তথ্য মতে, কাতারে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী করেছেন, যাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। সেখানকার ৮০ শতাংশেরও বেশি বাংলাদেশি পুরুষ শ্রমিক নির্মাণ খাতে কাজ করেন।

উপসাগরীয় দেশটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় রেমিট্যান্স আহরণের উৎস। প্রবাসী শ্রমিকরা গত বছর কাতার থেকে এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন বলে জানা যায় সরকারি তথ্য থেকে।

কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্ট অনুযায়ী, গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক প্রধান খালিদ ইব্রাহিম আল-হামারের সঙ্গে বৈঠককালে আটকে পড়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে কাতারের সহযোগিতা চান।

জবাবে কাতারের কর্মকর্তা রাষ্ট্রদূতকে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম এশিয়া শাখা) এফএম বোরহান উদ্দিন জানান, আটকে পড়া প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি তারা যাচাই করবেন।

তিনি আরও জানান, কাতারসহ জিসিসিভুক্ত যেকোনও দেশে শ্রমিকদের প্রবেশের জন্য ছাড়পত্র নিতে হলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে।

সম্প্রতি তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সেটা করা না হলে তাদের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা শ্রমিকদের প্রবেশের ছাড়পত্র দেবে না এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসও পুনরায় প্রবেশের ভিসা দেবে না।

নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় করার পরও আটকে পড়া শ্রমিকরা পুনরায় প্রবেশের অনুমতি পাননি, এটি হতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমস্যা অন্য কোথাও হতে পারে।’

আটকা পড়া শ্রমিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন বলে মন্তব্য করেন।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

7h ago