ইতালিতে দ্বিতীয় দফায় ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত

ইতালিতে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, প্রথম দফার তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম।
করোনা মহামারির প্রথম দফার সময় ফাঁকা ভবনের ছবি তুলছেন এক ইতালিয়ান। রোম, ইতালি, ১৪ মার্চ ২০২০। ছবি: রয়টার্স

ইতালিতে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, প্রথম দফার তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে এমন ধারণা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আগে থেকেই ছিল, বিধায় মানুষ এ দফায় বাড়তি সতর্কতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করেছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষরা পারিবারিক এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ নজরদারিতে থাকায় তাদের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা অনেক কম। এ দফায় ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে যুবকরা, যাদের বয়স ২০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।

ইতালিয় স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অধিকাংশ মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে মানুষ ব্যাপক হারে আক্রান্ত হলেও মৃত্যু ঝুঁকি কমে এসেছে। এ দফায় প্রায় অর্ধেক করোনা পজিটিভ মানুষের শরীরে সংক্রমণের কোনো আলামত দৃশ্যমান হচ্ছে না। কিন্তু, পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে তাদের শরীরে করোনার সংক্রমণ হয়েছে। এসব কারণে অধিকাংশ আক্রান্ত মানুষ বুঝতেও পারছে না যে, সে করোনায় আক্রান্ত।

অন্যদিকে মৃত্যুর হার কম থাকায় যুবকদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আগের মতো কড়াকড়ি নিয়মের মধ্যে থাকতে চাইছে না।

ইতালির সরকার প্রশাসন অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শীতের শুরুতেই বাড়তি সতর্কতামূলক অবস্থান গ্রহণ করেছে। নতুন মহামারির আশঙ্কায় রাতের আড্ডা হয় এমন সব প্রতিষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘর থেকে বের হলেই মাস্কের ব্যাবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া বা অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখলেও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

দুই.

প্রথম দফায় ইতালিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা খুব বেশি করোনাক্রান্ত না হলেও দ্বিতীয় দফায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে স্থানীয় মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি অভিবাসী করোনাক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে কমিউনিটির যে অংশ বাঙালি পাড়ায় আড্ডা করতে পছন্দ করে এবং যেসব অঞ্চলের বাংলাদেশিরা বড়বড় কলকারখানায় একই জায়গায় চাকরি করে তাদের মধ্যে সংক্রমণ সব থেকে বেশি হয়েছে।

ভেনিসের স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই অঞ্চলের জহাজশিল্পে চাকরি করা বাংলাদেশিদের ৬৯ শতাংশ কোভিডাক্রান্ত। আশঙ্কাজনক এই খবর প্রকাশের পর স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্রশাসন দফায় দফায় কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে কমিউনিটির সচেতনাংশের সহযোগিতা চেয়েছে। আক্রান্তদের বাসায় বাসায় গিয়ে তদারকি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যখন প্রাইভেট ফ্লাইটে অভিবাসীরা আসেন তখন থেকেই মূলত আমাদের কমিউনিটিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তখন যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তাদের অধিকাংশই ১৪ দিনের নিয়মকানুন মানেননি। তারা ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাঙ্গালী পাড়ায় আড্ডা দিয়েছেন। মেসে থেকেছেন। অন্য পরিবারের সঙ্গে সাবলেট থেকেছেন। চাকরির জায়গায় একসঙ্গে অনেক মানুষ কাজ করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেছেন। এসব কারণেই দ্বিতীয় দফায় ইতালিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ব্যাপক আক্রান্ত হয়েছেন, হচ্ছেন।

তিন.

শুধু ইতালি নয় গোটা ইউরোপজুড়েই করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে। স্পেন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশের অবস্থা ভয়াবহ। এ দফায় মানুষের ব্যাপক মৃত্যু ঝুঁকি আগের মতো না থাকলেও ভয়ের অনেক কারণ আছে। দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিবাসীসহ ব্যাপক মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। মানুষের খাবারসহ নিত্য প্রয়োজন মেটাতে দাতব্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে হয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি বেকারত্বের মহামারিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর জুসেপ্পে কোনতে জানিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর থেকে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আনা সম্ভব হবে। ২০২১ এর জানুয়ারি থেকে শিশুদের টিকার তালিকায় করোনা টিকা সংযোগ করা হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সমালোচকরা বলেছেন, বিশ্ব নেতারা এখন করোনা ব্যবসা নিয়ে মেতে আছেন। তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দেন-দরবার করছেন। করোনার রাজনীতিতে কে কাকে ল্যাং মারবেন তা নিয়েই বেশি সময় ব্যয় করছেন।

সমালোচকদের ভাষায়- বিশ্বনেতাদের মূল উদ্দেশ্য জনগণকে ভয়ের মধ্যে রেখে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। দুনিয়া জুড়ে ক্ষমতার সিন্ডিকেট তৈরি করা এবং মানুষের স্বাধীন চিন্তাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করা।

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago