লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি

Lalmonirhat_beaten_death_30.jpg
ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় মসজিদের ভেতরে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে কমিটি। আজ শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আবু জাফর দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদ আলাদা তিনটি মামলা দায়ের করবে, সেই প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পুরো এলাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা আলামত সংগ্রহ করছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনা বর্ণনা রেকর্ড করা হচ্ছে। আগামী ১ নভেম্বর কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার সীমান্তবর্তী বুড়িমারী ইউনিয়নের বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাশে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ভেতরে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করে মুসল্লিরা। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে তার সঙ্গে থাকা আরেক ব্যক্তি সুলতান মো. রুবাইয়াত সুমনকে (৪৮) আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জুয়েলের বাড়ি রংপুর শহরের শালবাগান এলাকায়। তার বাবা মৃত আবদুল ওয়াজেদ মিয়া। জুয়েল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। সুমন রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ার মৃত শেখ আব্বাসের ছেলে।

বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি আসরের নামাজ শেষ করে বাইরে যাওয়ার সময় দেখি খাদেম জুবেদ আলী দুই জন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরপর মসজিদের ভেতর কী হয়েছিল সেটা আমার জানা নেই।’

জুবেদ আলী বলেন, ‘নিজেকে গোয়েন্দার লোক পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি মসজিদের বুক সেলফে রাখা কোরআন শরীফ ও হাদিসের বই নাড়াচড়া করে দেখতে থাকেন। এ সময় কোরআন শরীফ নিচে পড়ে গেলে পাশে থাকা মুসল্লিরা চিৎকার শুরু করে। আমি বাধা দেওয়া চেষ্টা করি, তারপরও কয়েক জন মুসল্লি ওই ব্যক্তিকে মসজিদের বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর শুরু করে।’

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তেজিত মুসল্লিরা যখন দুই জনকে মারধর করছিল আমি তখন তাদের উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে আটকে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করি। মুহূর্তে শত শত লোকজন জড়ো হতে থাকে। আমি ফোন করে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রধান, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। তারা সবাই উপস্থিত হন। উপস্থিত জনতা কোনো কথা না শুনে ইউনিয়ন পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে একজনকে বের করে পিটিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় বাঁশকল এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।’

এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুন নাহার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও উপস্থিত ছিলেন। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। আমি কয়েক জন পুলিশ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে দুই জনকে রক্ষার চেষ্টা করছিলাম। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেই বিক্ষুদ্ধ জনতা এক জনকে মারধর শুরু করে। অন্য জনকে কোনো রকমে রক্ষা করি। হামলায় আমি নিজেও আহত হয়েছি। আহত সুমন জানিয়েছেন, তারা মোটরসাইকেলে রংপুর থেকে বুড়িমারীতে বেড়াতে এসেছিলেন।’

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত রাতেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়ের করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

9h ago