প্রবাস

দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ, ইতালি প্রবাসীর পাসপোর্ট আটকে রাখার অভিযোগ

অনেক দিন ধরে ইতালিতে বসবাসকারী অভিবাসীদের একটি অভিযোগ করতে শোনা যায়- প্রবাস থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের সরকার অথবা দূতাবাসের কাজের সমালোচনা করে কিছু লিখলে, শেয়ার করলে হয়রানির শিকার হতে হয়। পাসপোর্ট নবায়ন বা দূতাবাসে অন্যান্য সেবার জন্য গেলে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। অনেক সময় পাসপোর্ট আটকে রাখা হয় এবং সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয় সরকার বা দূতাবাসের সমালোচনা করার কারণে পাসপোর্ট ঢাকায় আটকে রাখা হয়েছে।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অনেক দিন ধরে ইতালিতে বসবাসকারী অভিবাসীদের একটি অভিযোগ করতে শোনা যায়- প্রবাস থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের সরকার অথবা দূতাবাসের কাজের সমালোচনা করে কিছু লিখলে, শেয়ার করলে হয়রানির শিকার হতে হয়। পাসপোর্ট নবায়ন বা দূতাবাসে অন্যান্য সেবার জন্য গেলে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। অনেক সময় পাসপোর্ট আটকে রাখা হয় এবং সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয় সরকার বা দূতাবাসের সমালোচনা করার কারণে পাসপোর্ট ঢাকায় আটকে রাখা হয়েছে।

সাম্প্রতিক এমন একটি ঘটনা নিয়ে ইতালির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সোহেল মজুমদার শিপন নামের একজন অভিবাসী অভিযোগ করেছেন, মিলানোর বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে তার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। কারণ, শিপন একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদনা করেন। গত আগস্ট মাসের ২১ তারিখে তিনি তার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে তুলে ধরা হয় কনস্যুলেট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ।

‘দুর্নীতির আখড়া ইতালির মিলান বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস’ শিরনামে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরে ইতালি প্রবাসী আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা শিপনকে ফোন করেন এবং প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলতে চাপ প্রয়োগ করেন। শিপন তা অগ্রাহ্য করে বলেন, ‘কনস্যুলেট প্রকাশিত প্রতিবেদন অসত্য মনে করলে প্রতিবাদ লিপি অথবা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে পারে, আমরা তা প্রকাশ করবো। এর বেশি কিছু করার নেই।’

গত আগস্ট মাসেই শিপন তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ মোট চার জনের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মিলানোর কনস্যুলেটে জমা দেন। পাসপোর্ট ডেলিভারির সময় হলে শিপন দেখেন কনস্যুলেটের অফিসিয়াল পেজে তার স্ত্রীর পাসপোর্ট রেডি হওয়ার তথ্য থাকলেও নিজের পাসপোর্ট এবং দুই সন্তানের পাসপোর্ট ডেলিভারির কোনো তথ্য নেই।

শিপন তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জানতে চেয়ে মিলানোর কনসার্ল জেনারেল ইকবাল আহমেদকে ইমেইল করেন। ইমেইলের উত্তর না পেয়ে ফোন করেন। কিন্তু, বহুবার চেষ্টা করেও তিনি কনসার্ল জেনারেলের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।

এরপর শিপন অন্যসূত্রে খবর নেওয়ার চেষ্টা করে জানতে পারেন, কনস্যুলেটের দুর্নীতি বিষয়ক অভিযোগের প্রতিবেদন তার পত্রিকায় প্রকাশের কারণে তার এবং সন্তানদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি তাকে জামায়াতের সমর্থক বলেও প্রচার করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, জামায়াত সমর্থক শিপন তার দেশপ্রিয় পত্রিকায় দেশের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন।

সোহেল মজুমদার শিপন বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। দেশে থাকতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। দেশেই সাংবাদিকতা শুরু করি, প্রবাসেও করছি। নিজের চেষ্টায় একটা পত্রিকা চালাচ্ছি দীর্ঘ দিন। কখনো গায়ে কোনো কালি মাখিনি। অথচ আমার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। আমাকে দেশ বিরোধী বলা হয়েছে। বিএনপি জামায়াত বলা হয়েছে।’

শিপন প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমি যদি আমাদের কনস্যুলেট দ্বারা এমন হয়রানির মুখে পড়ি। তবে, অন্যান্য প্রবাসীরা কতোভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।’

এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মিলানোর কনসার্ল জেনারেল ইকবাল আহমেদকে ইমেইল করি। জানতে চাই সোহেল মজুমদারের অভিযোগের সত্যতা কতোটুকু?

২৮ অক্টোবর করা ইমেইলের উত্তর না পেয়ে ইকবাল আহমদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু, অনেকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এরপর নিজস্ব সূত্রে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি এবং জানতে পারি- কনসার্ল জেনারেল ইকবাল আহমেদ ইমেইলের উত্তর না দিয়ে রোমের একজন সাংবাদিকের কাছে মেইলটি হুবহু পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, ইতালি থেকে বদলি হয়ে তিনি হংকং চলে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে এসব নিয়ে কথা বলতে চান না।

উল্লেখ্য, অতীতে কোনো তথ্য দরকার হলে বা যাচাই করার প্রয়োজন হলে ইকবাল আহমেদের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করেছি এবং তিনি সব সময় উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

এরপরে মুঠফোনে যোগাযোগ করি রাষ্ট্রদূত সোবহান শিকদারের সঙ্গে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে ইতালিতে এমন কোনো ঘটনা ঘটে না। দূতাবাসে কেউ সেবা নিতে এলে সব সময় সঠিক সেবা দেওয়া হয়।’

নির্দিষ্ট করে সোহেল মজুমদারের ঘটনাটা জানালে তিনি বলেন, ‘মিলানোর কনস্যুলেটে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। যদি কখনো জানার সুযোগ হয় আপনাদের জানাতে পারবো।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago