পুলিশ পরিদর্শকের নাক ফাটালেন উপপরিদর্শক, কমিশনারের কাছে অভিযোগ

চট্টগ্রামে এক পুলিশ পরিদর্শকের নাক ফাটিয়েছেন আরেক উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই)। শুধু নাক ফাটিয়ে ক্ষান্ত হননি তাকে পরানো হয় হাতকড়াও।
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ২
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামে এক পুলিশ পরিদর্শকের নাক ফাটিয়েছেন আরেক উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই)। শুধু নাক ফাটিয়ে ক্ষান্ত হননি তাকে পরানো হয় হাতকড়াও।

চট্টগ্রাম শহরের রিয়াজুদ্দিন বাজারের প্যারামাউন্ট সিটি নামে একটি বিপণি বিতানের নিচ তলায় গত ২৫ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে। তবে চার দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর কোতোয়ালী থানার এসআই রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন মারধরের শিকার মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেন।

এসআই রবিউল নগরীর কোতয়ালী থানাধীন সি আর বি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত।

সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে জুনিয়র কর্মকর্তার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ও চাপা ক্ষোভ দেখিয়েছেন পুলিশের বিভিন্ন পদে থাকা সদস্যরা।

তবে যে কারণে এই ঘটনা তার টানা অনুসন্ধান করে এখনো তার অস্তিত্ব পায়নি তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের ধারণা, ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ তথ্য দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে কোনো একটি পক্ষ এই ঘটনার ঘটিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিয়াজুদ্দিন বাজারের মোবাইল ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গত ২২ অক্টোবর বিকালে নগরীর কোতয়ালী থানাধীন কদমতলী -আট্মার্চিং মোড়ে বাস থেকে নামিয়ে তার কাছ থেকে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছে।

২২ তারিখ ছিনতাই হলেও নুর মোহাম্মদ ২৪ তারিখ থানায় গিয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিনের কাছে মৌখিক অভিযোগ করলে পূজার ব্যস্ততার জন্য ওসি তাকে আরও একদিন পরে এসে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন এবং এসআই রবিউলকে বিষয়টি দেখতে বলেন, বলে পুলিশ সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, ২৫ অক্টোবর পরিদর্শক আফতাব ও হাসান নামের এক পরিচিত লোককে নিয়ে রিয়াজুদ্দিন বাজারে বাজার করতে যান। একই সময়ে, নুর মোহাম্মদের ছেলে রাসেল ও নুর মোহাম্মদ এস আই রবিউলকে ফোন দিয়ে জানান ছিনতাই যারা করেছেন তাদের পাওয়া গেছে এবং সেই মার্কেট এলাকায় আসতে বলেন ।

পুলিশ সূত্র জানায়, এসআই রবিউল ফোন পেয়ে সাদা পোশাকে থানার এএসআই অনুপসহ একটি টিম নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং পরিদর্শক আফতাবকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই হাতকড়া পরান।

পুলিশ সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতকড়া পড়িয়ে টানাটানি শুরু করলে পুলিশ কর্মকর্তা আফতাব তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন এবং নিজেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দেন। পরিচয় দেওয়া মাত্রই এসআই রবিউল ঘুষি দিয়ে তার নাক ফাটিয়ে দেন এবং হাতকড়ার অন্যপাশ হাসানের হাতে লাগান।

পরে তার আইডি কার্ড ও ওয়্যারলেস সেট দেখে হাতকড়া খুলে দেন এবং ঊর্ধ্বতন অফিসারদের আদেশে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশ ও তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই সিএমপির ঊর্ধ্বতন অফিসাররা থানায় যান এবং তদন্ত শুরু করেন। রাতভর তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখেন।

তদন্ত করে কর্মকর্তারা নিশ্চিত হোন যে ছিনতাইয়ের সময় পুলিশ পরিদর্শক আফতাব তার বাসায় অবস্থান করছিলেন। আর হাসান ছিলেন পটিয়া উপজেলায় নিজের বাসায়।

বাদীর সন্দেহজনক আচরণ

ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী নুর মোহাম্মদ পুলিশকে একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিনিয়র পুলিশ কর্তারা। নুর মোহাম্মদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি রিয়াজুদ্দিন বাজারের তামাকুমন্ডি লেনের রেজোয়ান মার্কেটে নিউ মোবাইল টাচ নামের একটি দোকান চালান।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি পুলিশকে বলেছেন টিফিন ক্যারিয়ার ও ব্যাগ নিয়ে তিনি বাসে উঠেছিলেন কিন্তু তদন্তকারীরা মার্কেটের সে দিনের সিসিটিভি ফুটেজে তার হাতে কোনো টিফিন ক্যারিয়ার দেখেননি। এছাড়া তিনি পুলিশকে একবার বলছেন তিনি তিন নম্বর বাসে উঠেছেন আবার বলেছেন দুই নম্বর বাসে উঠেছেন।

বড় অংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও তিনি বা তার ছেলে এই ঘটনা মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির কোনো নেতা বা পার্শ্ববর্তী কোনো দোকানদারকেও জানাননি।

এই প্রতিবেদক বাদীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলতে তার দোকানে দুই দিন গেলেও তিনি সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

পরিদর্শককে মারধরের ঘটনার পর তিনি ২৬ তারিখ অজ্ঞাতনামা দুই জনকে আসামি করে কোতয়ালী থানায় একটি ছিনতাইয়ের মামলা করেন।

থানা পুলিশের ভাষ্য

ছিনতাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন বিষয়টি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া সাদা পোশাকে অভিযান ও মার্কেটে গিয়ে মারধরের বিষয়টিও তিনি এড়িয়ে যান।

ঘটনা জানতে এসআই রবিউলকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি স্যারকে চিনতে পারিনি।’

তবে লিখিত অভিযোগ ছাড়াই কেন তিনি অভিযানে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, এসআই রবিউল কয়েক বছর আগে নগরীর বন্দর থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন।

সিএমপি কমিশনারের ভাষ্য

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামি। যেহেতু বাদীর অভিযোগ পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই তাই আমরা আফতাবের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য বিষয় বিশ্লেষণ করি এবং নিশ্চিত হয়েছি যে ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় আফতাব সেখানে ছিলেন না।’

‘আমরা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাবার পর বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি কিন্তু সেখানে এখন পর্যন্ত ছিনতাই সম্পর্কিত কিছু পাওয়া যায়নি। তবে আমরা এখনো তদন্ত করছি,’ বলেন সিএমপি কমিশনার।

প্রসঙ্গত, পরিদর্শক আফতাব সিএমপিতে চৌকস কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত এবং বোমা নিষ্কৃয়করণ ইউনিটে কর্মরত। জঙ্গি দমনসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তে তার সাফল্য রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago