মার্কিন নির্বাচনে আগাম ভোট সমাচার

মেইলে ভোট ও ডাকযোগে আগাম ভোট এবং সর্বশেষ বুথে গিয়ে ভোট। যতভাবে ভোট নেওয়া যায় তার সম্ভবত সব পদ্ধতিতেই এবার প্রয়োগ করা হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দুই মার্কিন নাগরিক। ছবি: রয়টার্স

মেইলে ভোট ও ডাকযোগে আগাম ভোট এবং সর্বশেষ বুথে গিয়ে ভোট। যতভাবে ভোট নেওয়া যায় তার সম্ভবত সব পদ্ধতিতেই এবার প্রয়োগ করা হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।

দেশটির প্রায় ২৪ কোটি ভোটারের মন জয় করে ভোট পাওয়া এবং ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও একটি ফেডারেল ডিসট্রিক্টের ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্য থেকে ২৭০টি পাওয়ার লড়াইয়ে নামা প্রার্থীদের মধ্যে মূলত আলোচনায় রয়েছেন দুজন। তাদের একজন ডেমোক্রেট পার্টির জোসেপ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, যিনি জো বাইডেন নামেই পরিচিত। অপর প্রার্থী রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড জন ট্রাম্প, যিনি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং সবার কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্প নামে পরিচিত।

ভোটাররা নানাবিধ প্রক্রিয়ায় হাতি এবং গাধা মার্কায় যথাক্রমে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনকে ভোট দেওয়া শেষ করলেও এখনও শেষ হয়নি ভোট গণনা। তার আগেই দুই প্রার্থী নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন।

ভোট গণনা চলাকালেই নিজ শহরে সমর্থকদের সামনে মধ্যরাতে হাজির হয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমরা নির্বাচন জেতার সঠিক পথে আছি। বিশ্বাস রাখুন। আমরা জিততে যাচ্ছি।’

বাইডেন এমন মন্তব্য করার পর নানাবিধ বিতর্কিত মন্তব্য করে তুমুল আলোচনায় থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পও চুপ থাকেননি। তিনিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে টুইট করেছেন, ‘আমরা বড় ব্যবধানে জিততে চলেছি।’

এর আগে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ফ্লোরিডা, টেক্সাস এবং ওহিওতে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউজ থেকে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত, বলতে গেলে জিতেই গেছি।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘আমাদের লাখো ভোটারকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। কিন্তু একদল হতাশাগ্রস্ত মানুষ আমাদের ভোটারদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে।’

ভোট গণনার কারচুপির অভিযোগের পাশাপাশি এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন ডাকযোগে আসা ভোটের ব্যাপারেও। গতকাল মঙ্গলবার টুইট করে তিনি বলেছেন, ভোটের পরে আসা এসব ভোটকে গণনায় ধরা যাবে না।

তার এ মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করেছে সকল মহলে। এমনকি তার নিজ দলেও। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন কমিশনের কো-চেয়ার বেঞ্জামিন এল. জিন্সবার্গ ট্রাম্পের মন্তব্যে দ্বিমত জানিয়ে বলেন, ‘প্রতিটি ভোট গণনা করা উচিত। যদি প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি থাকে তাহলে পরবর্তীতে প্রচলিত আইনে আবারও গণনা করা হবে বা বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডাকযোগে আসা ভোটের ব্যাপারে ট্রাম্পের মন্তব্যকে রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিনি যদি দেখেন যে ফলাফল তার পক্ষে না, তখন হয়তো আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে তিনি পার পেয়ে যাবেন। যারা ভবিষ্যৎবাণী করছেন, তারা তো সব দেখে বলছেন সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।’

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিখাইল ম্যাকডোনাল্ডের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম ইউএস টুডে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বা এর বেশি বয়সের মানুষের সংখ্যা ২৫ কোটি ৭০ লাখ। তাদের মধ্যে প্রায় ২৪ কোটি মানুষ এ বছর ভোট দিতে পারবেন।

এর মধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন ১০ কোটি ২৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫২২ জন। ডাকযোগে পাঠানো ভোটের একটি অংশ সময় মতো কর্তৃপক্ষের হাতে না পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘তাদের দেশের আইনে যেহেতু এভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে, তাই শেষ ভোটটি পর্যন্ত গণনা হবে বলে আমি মনে করি।’

নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে জো বাইডেন পেয়েছেন ২২৭টি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৩টি। ফল ঘোষণা বাকি আরও ৯৮টির। এর মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ছয় কোটি ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৬টি ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ছয় কোটি ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৭টি ভোট।

ফক্স নিউজ এবং আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জো বাইডেন ২৩৮টি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন।

মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও একটি ফেডারেল ডিসট্রিক্টের মধ্যে ১৫টিতে বাইডেন এবং ১৩টিতে ট্রাম্প সহজ জয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সেটি তারা পেয়েছে। এই ২৮টি ছাড়া বাকি ২৩ রাজ্যের ১০টিতে বাইডেন এবং ৭টিতে ট্রাম্প সম্ভাব্য জয় পেতে পারেন বলে যে ধারণা করা হয়েছিল সেখানে এসেছে পরিবর্তন। আলাস্কা, ইন্ডিয়ানা, কানসাস, মিসৌরি, মন্টানা, সাউথ ক্যারোলিনা এবং উটাহ রাজ্যে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। এই ৭টি রাজ্যের মধ্যে ৬টিতে জয় নিশ্চিত করে আলাস্কার ভোট গণনাতেও এগিয়ে রয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বাইডেন বিজয়ী হতে পারেন এমন সম্ভাব্য ১০টি রাজ্যের মধ্যে মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। বাকি ৭টির মধ্যে কলরোডা, মেইন, মিন্নেসোটা, নিউ হ্যাম্পশায়ার এবং ভার্জিনিয়াতে জয় নিশ্চিত করে অ্যারিজোনা এবং নেভেদাতেও এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন।

এছাড়াও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে অর্থাৎ যে রাজ্যগুলোতে কারোই সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই এমন রাজ্য মনে করা হতো ফ্লোরিডা, আওয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহিও এবং টেক্সাসকে। এর মধ্যে ফ্লোরিডা, আওয়া, ওহিও ও টেক্সাসে ইতিমধ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প এবং জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনাতেও তিনিই এগিয়ে রয়েছেন।

নির্বাচনের ফলাফল আপাত দৃষ্টিতে ট্রাম্পের পক্ষেই রয়েছে এবং ট্রাম্পকে এই নির্বাচন আদালত পর্যন্ত টেনে নিতে হবে না বলেই মনে করেন অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ‘তবে তিনি যেটা বলেছেন, নির্বাচনের ফল তার পক্ষে না গেলে নির্বাচনকে আদালতে নিয়ে যাবেন, বিষয়টি দীর্ঘায়িত করবেন। তেমন কিছু হলে, বিপদটা শুরু হবে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, মারামারি একেবারে অবধারিত।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago