উৎকণ্ঠার অপেক্ষা, আদালতের শঙ্কা: আলী রীয়াজ
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/ali-riaz.jpg?itok=Xf6XZkv4×tamp=1604508201)
আমেরিকার নির্বাচন, আগাম ভোট, সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে ট্রাম্পের ভোট গণনা বন্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকি, ফলাফল জানার সময়কাল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে রাজনীতি বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো আলী রীয়াজের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। আগাম ভোট ও সেই ভোট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে কেন?
অধ্যাপক আলী রীয়াজ: আগাম ভোট হচ্ছে দুই ধরনের। এক সশরীরে ৩ নভেম্বরের আগে যারা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিয়েছেন। সে সময় বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিভিন্নভাবে ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছিল। সেসব জায়গায় গিয়ে মানুষ ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোটের আরেকটি ধরন হচ্ছে যে, ডাকযোগে ভোট বা মেইল-ইন ভোট। মেইল-ইন ভোট যেকোনো অঙ্গরাজ্যে আসলে নিয়মতান্ত্রিক। ব্যালট ডাকযোগে পাঠাতে হবে। কিন্তু, কোনো অবস্থাতেই পোস্টমার্ক ৩ নভেম্বরের পরে হওয়া যাবে না। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে নিয়ম হচ্ছে যে, ৩ নভেম্বরের মধ্যেই পৌঁছতে হবে। তাহলে গোনা হবে, না হলে গোনা হবে না। কোথাও কোথাও সেটা এর পরের তিন দিন, কোথাও কোথাও তারচেয়েও বেশি সময় দেওয়া আছে। যেমন পেনসিলভেনিয়াতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে অর্থাৎ নির্বাচন শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে যদি পৌঁছায়, তবে গণনা করতে হবে। কিন্তু, পোস্ট করা হতে হবে ৩ নভেম্বর বা তার আগে। সেটা যদি তিন দিনের মধ্যে পৌঁছায় সেটা গণনা করা হবে।
ডেইলি স্টার: পেনসিলভেনিয়ার একটি আদালতে রায় দিয়েছিল বলেই কী এই নিয়ম?
আলী রীয়াজ: হ্যাঁ। তবে অন্য রাজ্যগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম আছে। আগে থেকেই আছে। এমনকি কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে এটা ৯ নভেম্বর পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা আছে।
ডেইলি স্টার: তাহলে কি সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, যারা আগাম ভোট দিয়েছেন, তাদের প্রায় সবার ভোটই গণনার মধ্যে আসবে?
আলী রীয়াজ: হ্যাঁ। আপনি যদি ভোট দিয়ে থাকেন তাহলে ভোট গণনা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থাটা করা হয়েছে।
ডেইলি স্টার: ডাকের ভোট কি সাধারণত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যায়?
আলী রীয়াজ: আসার কথা, তবে সবসময় যে আসে তা নয়। বিশেষ করে এবার মেইল ডেলিভারি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। ফলে, কোথাও কোথাও হয়তো আমরা পরে দেখবো যে ব্যালট শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের ভেতরে যায়নি। ইতোমধ্যে, নির্বাচনের দিন ৩ তারিখ ফেডারেল কোর্ট আবিষ্কার করেছিল যে, একাধিক রাজ্যে মেইল প্রসেসিং দেরি হচ্ছে। সেজন্য কোর্ট অর্ডার দিয়েছিল সুইপ করার জন্য। অর্থাৎ সেগুলো প্রসেসিং সেন্টারে খুঁজে বের করে তা গণনার জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে। ইউএস পোস্টাল সার্ভিসকে বলেছে, তোমরা যেভাবে হোক খুঁজে বের করো, লোক পাঠিয়ে বিভিন্ন প্রসেসিং সেন্টার থেকে এগুলো আলাদা করে অবিলম্বে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করো। সর্বত্র সেটা হয়েছে তা নয়। কিছু এবার হয়ত আমরা দেখব আগে জমা দেওয়ার পরও মেইল প্রসেসিং ঠিক মতো না হওয়ায় কিছু ভোট সম্ভবত নির্ধারিত দিনের মধ্যে পৌঁছাবে না। সেই আশঙ্কটা থেকে যাচ্ছে। এবার শুরু থেকেই এই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, কেননা মেইল প্রসেস করার ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ডেইলি স্টার: ট্রাম্প তো বেশ এগিয়ে আছেন, সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তাহলে তিনি আদালতে যাওয়ার হুমকি কেন দিচ্ছেন?
আলী রীয়াজ: এখন পর্যন্ত ইলেক্টরাল কলেজ ভোটে তিনি কিন্তু পিছিয়ে আছেন। তবে হ্যাঁ, তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন যেহেতু গণনা শেষ হয়নি এমন অনেক রাজ্যে তিনি এখন এগিয়ে আছেন; কিন্তু মনে রাখবেন ভোট গণনা যেহেতু শেষ হয়নি, ভোট গণনা শেষ হলে যে তিনি এই সুবিধার মধ্যে থাকবেন, তা নিশ্চিত নয়। এখন পর্যন্ত যেহেতু বাইডেনের বিজয় সম্ভব, সেটা ট্রাম্প নিশ্চিত করতে চাইছে যে, এটা যেন কোনোভাবেই না ঘটে। তার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ফলাফল যেন পরিবর্তিত না হয়।
ডেইলি স্টার: বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা আছে?
আলী রীয়াজ: হ্যাঁ। অবশ্যই আছে। এখনও বাইডেনের বিজয় মোটেই অসম্ভব নয়।
ডেইলি স্টার: কীভাবে সম্ভব?
আলী রীয়াজ: এখন পর্যন্ত যে লক্ষ লক্ষ ভোট গণনার বাইরে আছে, যে সমস্ত অঙ্গরাজ্যে এখন পর্যন্ত ভোট গননা চলছে, ওই সব ভোট যুক্ত করলে বাইডেন যে জিতবেন না, এমন তো নয়। জেতার সম্ভাবনা তো আছেই। এখন পর্যন্ত যে অঙ্গরাজ্যগুলো আছে, তার মধ্যে যদি তিনটাও জেতেন, তাহলেই তো তিনি ২৭১ এর বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে যেতে পারেন। ট্রাম্প এখন এটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন যে, বাকি ভোটগুলো গণনা বন্ধ করতে হবে, যেকোনো ভাবেই হোক।
ডেইলি স্টার: সেটা কি আইনগতভাবে সম্ভব?
আলী রীয়াজ: আইনগতভাবে সম্ভব এই অর্থে যে তিনি যদি আদালতে যান, আদালত যদি তার পক্ষে থাকে যে ঠিক আছে এগুলোতে আপাতত ইনজাংকশন জারি করা হলো। আসেন, কেন আপনি বন্ধ করার কথা বলছেন সেটা যাচাই করে দেখি। তারা বলতে চাচ্ছেন, এখন যে ভোটগুলো গোনা হচ্ছে, সেগুলো আসলে তিন তারিখের মধ্যে দেওয়া ভোট নয়। যেহেতু, বাইডেনের বিজয়ের সম্ভাবনা এখনও আছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাচ্ছেন সেটা বন্ধ করতে। এবং সেটা করার পদ্ধতি হচ্ছে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আদালতের মাধ্যমে আইনগতভাবে ভোট গণনা বন্ধ করা।
ডেইলি স্টার: সে কারণেই আদালতে যাওয়ার হুমকি?
আলী রীয়াজ: আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ট্রাম্প জিততে চলেছেন, তবে তিনি কেন আদালতে যাবেন? কিন্তু তার চিন্তার বিষয় হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ ভোট বাইরে আছে এখনও। গণনা হয়নি।
ডেইলি স্টার: এই সংখ্যাটা কত, যেটা গণনার বাইরে আছে?
আলী রীয়াজ: এটা আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না। বলতে পারব না এই কারণে যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এর সংখ্যা অনেক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্লি ভোট বা ইন-পারসন ভোট গণনাও শেষ হয়নি। উইসকনসিনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আমরা যেটা জানি দেখা যাচ্ছে মিলওয়াকি শহরের আশপাশের যে সমস্ত ভোট, সেগুলো সব গোনা শেষ হয়নি। মিলওয়াকি ডেমোক্রেটদের একটা দুর্গ। ওইখানে বাইডেন যদি বিজয়ী হতে পারেন, উইসকনসিনে বিজয়ী হওয়া মানে ২৭১ ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এবং তার সঙ্গে যদি কোনো কারণে মিশিগান যুক্ত হয়, পেনসিলভেনিয়া যুক্ত হয়।
ডেইলি স্টার: পেনসালভানিয়া কি যুক্ত হওয়ার মতো অবস্থায় কি এখনও আছে?
আলী রীয়াজ: আমরা জানি না কত ভোট গোনা হয়নি। এটা কিন্তু আমাদের জানা নেই। কত ভোট গোনা হয়নি সেটার তো আর হিসেব নেই। কিছু ভোট তো এখনো আসেইনি সম্ভবত। সুতরাং নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
ডেইলি স্টার: আমেরিকান গণমাধ্যমে যে সংবাদগুলো দেখছি যে অমুক রাজ্যে ট্রাম্প জিতে গেল, অমুক রাজ্যে বাইডেন জিতে গেলো, ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে, ট্রাম্প ফ্লোরিডা পেয়ে গেল, এই যে ফলাফলগুলো আমরা জানছি, এখানেও কি গণনাহীন ভোট থেকে যাচ্ছে? এটা কি একটা কনফিউশন তৈরি করছে বা কনফিউশনের সুযোগ আছে?
আলী রীয়াজ: যে রাজ্যগুলোর গণনা সম্পন্ন হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে কনফিউশন তৈরির সুযোগ নেই। যে পাঁচ-ছয়টা অঙ্গরাজ্যে গণনা চলছে, শেষ হয়নি সেগুলো নিয়ে আলোচনা। সেগুলোর কোনো কোনোটার ফলাফল অত্যন্ত কাছাকাছি।
ডেইলি স্টার: এখন তাহলে ফলাফলগুলো জানতে কতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে? অনেকেই বলছেন যে দেরি হবে। দেরি হবে মানে কী?
আলী রীয়াজ: দেরি হবে মানে হচ্ছে, এটা আমরা জানি না। তিন দিন লাগতে পারে, ছয় দিন লাগতে পারে, নয় দিন লাগতে পারে, ১৫ দিনও লাগতে পারে। ভোটের সংখ্যার ওপর নির্ভর করবে। তারপর এই ভোট গণনা করার সময় যদি প্রশ্ন ওঠে, চ্যালেঞ্জ করা হয় যে এই ভোটের ঠিকমতো ব্যালট আছে কিনা- এ সমস্ত অনেক রকম জটিলতা থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যেটা নিশ্চিতভাবে জানি যে প্রত্যেকটা অঙ্গরাজ্যের একটা নির্ধারিত সময় আছে। তার মধ্যে রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা ফলাফল সার্টিফাই করবে। এখন আমরা যে ফলাফল জানছি, সেগুলো একেবারেই আনঅফিসিয়াল। মিডিয়া এবং অন্যদের দেওয়া তথ্য। অফিসিয়ালি সার্টিফাই করবে তো সেক্রেটারি অব স্টেট মানে সরকারি কর্মকর্তারা।
ডেইলি স্টার: এবারের নির্বাচন নিয়ে আপনার যে পর্যবেক্ষণ, তাতে কি মনে করছেন যে সত্যি সত্যিই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আদালতে যাবেন?
আলী রীয়াজ: আমার পর্যবেক্ষণ বলে যে, নির্বাচনের ফল শেষ পর্যন্ত সম্ভবত আদালতেই নিষ্পত্তি হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে।
ডেইলি স্টার: সেই ক্ষেত্রে তো একটা লম্বা সময়ের মধ্যে পড়ে যাবে। যদি ইনজাংকশন দেওয়া হয়, তাহলে কি হবে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই থাকছেন, কিন্তু মামলা চলতে থাকবে?
আলী রীয়াজ: হ্যাঁ। ট্রাম্প তো এমনিতেই জানুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। তবে, এই মামলা শেষ হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ও আছে। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে এই সমস্ত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে সমস্ত স্টেট ইলেক্টরদের স্টেট ক্যাপিটালে গিয়ে তাদের ইলেক্টোরাল ভোট দেওয়ার কথা। ওইটার নির্ধারিত তারিখ আছে।
Comments