সড়ক নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি: সেতুমন্ত্রী

চার-ছয়-আট লেনের সড়ক করা হলেও এখনো সড়ক নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ফটো

চার-ছয়-আট লেনের সড়ক করা হলেও এখনো সড়ক নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক নিরাপত্তা: ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও উদ্যোগ’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন, সড়ক নিরাপত্তা বিধান এখন আমাদের অগ্রাধিকার। প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে যে প্রাণ ঝরে যাচ্ছে অকালে, তা কারোরই প্রত্যাশিত নয়। প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার। তাই বলব, নিরাপদ সড়ক নিয়ে যত কথা হয়েছে, যত মিটিং, সমাবেশ, সেমিনার, আলোচনা হয়েছে, সে হিসেবে বাস্তবায়নের দিক বিবেচনা করলে আমাদের অগ্রগতি সেভাবে হয়নি। আমরা চার লেন, ছয় লেন, আট লেনের সড়ক করেছি। কিন্তু, সড়ক নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি। এখানে লুকানোর কিছু নেই। সত্য যা তা বলতেই হবে। সড়ক দুর্ঘটনা এখনো আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা।’

‘তবে এ কথাও সত্য যে, আমরা এ লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি অংশিজনদের সহযোগিতা নিয়ে। আপনারা জানেন, নিরাপদ সড়কের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন, এনফোর্সমেন্ট ও অ্যাওয়্যারনেস— এ তিনটি বিষয় সম্পর্কিত। সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি অপসারণে, বিশেষ করে এআরআই দেশব্যাপী ১৪৪টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করেছিল। পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ আরও কিছু যুক্ত করেছে। আমরা গত কয়েক বছরে প্রায় সাড়ে চার শ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করেছি। চার লেনের মহাসড়কের সঙ্গে ব্লক সংশ্লিষ্ট মহাসড়কের স্পটগুলো অ্যাড্রেস করা হয়েছে। পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রকল্প। যার আওতায় ১২১টি স্পটের ঝুঁকি প্রবণতা হ্রাস করা হয়েছে। দেশব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক করিডোর উন্নয়নের উদ্যোগ চলমান আছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার শ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে কাজ চলছে। চার লেনে উন্নীত মহাসড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্পটে বিভাজক বসানোর ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এখন দুর্ঘটনা নেই বললেই চলে’, বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘আশার কথা হলো— বিশ্বব্যাংক দেশের সড়ক নিরাপত্তায় অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। তারা কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে। প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে আমি বিশ্বব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এরইমাঝে পর্যায়ক্রমে আইন কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল অনুমোদিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নে গঠন করা হয়েছে একটি টাস্কফোর্স। এসডিজিসহ সরকারের গৃহীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক টার্গেট অর্জনে আমরা সচেষ্ট। অর্থাৎ আইনগত কাঠামো এখন জোরদার করা হয়েছে। এদিকে এনফোর্সমেন্ট জোরদারে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জনবল।’

‘সড়ক নিরাপত্তায় সড়ক ব্যবহারকারীদের সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এ কাজে বেসরকারি অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে। প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ সড়কের জন্য বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একা কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা নয়। এ কাজে সকল অংশিজনদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সমন্বয় যত ভালো হবে, সড়ক তত নিরাপদ হবে’, বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকের সেমিনারের প্রধান ফোকাস হচ্ছে ঢাকা মহানগরী এবং এর চারপাশের এলাকার সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে। দেখুন, নগর ব্যবস্থাপনায় অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও সংস্থা কাজ করছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা সত্যিকার অর্থেই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর পরিবহনের ক্ষেত্রে এ সমন্বয়ের কাজটি আইনগতভাবে ডিটিসি’র ওপর ন্যস্ত । আপনারা জানেন, ঢাকা মহানগরীর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কাজ শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর কাজটি আর এগোয়নি। এখন এ কাজটি এগিয়ে নিতে আমি দুই মেয়রকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

‘আমরা এখন যে কাজগুলো করছি, এগুলো করার দরকার ছিল ৩০/৩৫ বছর আগে। এখন জনবহুল এ শহরে কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন কী পরিমাণ চ্যালেঞ্জিং, তা আপনারা জানেন। নগরবাসীর জন্য গণপরিবহণের কনসেপ্টটিই আমাদের এখানে আগে কখনো প্রাধান্য পায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একদিকে বিআরটিসির সক্ষমতা বাড়াচ্ছি, অন্যদিকে মেট্রো রুট নির্মাণ করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে পাতাল ও উড়ালসহ মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট নির্মাণ করা হবে। এর মাঝে রুট-৬’র কাজ ৫২ শতাংশ শেষ হয়েছে। আরও দুটি রুটের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ডেডিকেটেড বাস লেন-বিআরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এগিয়ে চলেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ’, যোগ করেন তিনি।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বুয়েটের এআরআই সড়ক নিরাপত্তায় আমাদের অন্যতম অংশিজন। এ ছাড়া যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের নানারকম সাপোর্ট আমরা শুরু থেকেই নিয়ে আসছি। বিদেশি পরামর্শক নির্ভরতা আমাদের এখন অনেকটা কমে এসেছে। সম্প্রতি ডিটিসিএ ও এআরআই যে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করছে, তা ঢাকা মহানগরীতে সড়ক নিরাপত্তায় কৌশল নির্ধারণ সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি দিন দিন বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব পাচ্ছে। আমাদের সড়ক অবকাঠামো, এমআরটি, বিআরটি, মডার্ন ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং রোড সেইফটিতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রকৌশলী বা বিশেষায়িত জনবল। এমআরটিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে এখনো আমাদের বিদেশি জনবলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই, এসব ক্ষেত্রে জনবল তৈরিতে পাইওনিয়ার হিসেবে বুয়েট উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করি।’

‘বিগত কয়েক বছরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন যতই হোক, সড়ক ও পরিবহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে, নিরাপদ করতে না পারলে আমরাদের সব উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। আরেকটি বিষয় বলতে চাই। ডিটিসিএ শুধু ঢাকা নিয়ে কাজ করবে। আইন সংশোধন করে পুরো দেশে পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। অন্যান্য শহরগুলো নিজেরা নিজেদের পরিকল্পনা নেবে। এটাই যৌক্তিক’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago