নোয়াখালীতে আ. লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০
নোয়াখালীতে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সদর উপজেলার এওয়াজ বালিয়া ইউনিয়নে চর করমুল্লা বাজার সংলগ্ন তিন রাস্তার মাথা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েকটি দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
আহতদের মধ্যে ১০ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও দুই জনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এওয়াজ বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাচ্চু মিয়া ওরফে খোকা মেম্বার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুধারাম মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এওয়াজ বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান ও স্থানীয় করমুল্লা বাজার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক এবং কালা ধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল ডাক্তারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরেই বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাবুল ডাক্তারের অনুসারীরা মন্নান মেম্বারের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় মন্নান মেম্বারের লোকজনও পাল্টা হামলা চালায়। এতে দফায় দফায় রাত ১০টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনায় ২০ জন আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে ওইদিন রাতেই নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- আবদুল হক মাঝি (৪৮), কামাল উদ্দিন (৬০), সিরাজ (৫৫), আব্দুর রহমান (৫০), জাহাঙ্গীর (৩৮), সালাউদ্দিন (১৮), দেলোয়ার (২৩), শহীদ (৪৫), আবুল কাশেম (৫০), মো. লিটন (২৭), সিরাজ উদ্দিন (৪০), সাকিব ও জাহেদ। এরা সবাই চর করমুল্লা গ্রামের বাসিন্দা।
এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় আব্দুল হক মাঝি ও কামাল উদ্দিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাবুল ডাক্তারের অভিযোগ, মন্নান মেম্বারের লোকজন দীর্ঘদিন থেকে করমুল্লা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে। তিনি বাজার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে মন্নান মেম্বারের সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার অনুসারী কিছু যুবক করমুল্লা বাজারে গেলে মন্নান মেম্বার মোবাইল ফোনে তাকে ঘটনাটি জানান। এরপর বাবুল ডাক্তার তার লোকজনকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তারা চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে মন্নান মেম্বারের লোকজন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তার লোকজন ফিরে এসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এখানে তার লোকজনের কোনো দোষ নেই দাবি করেন বাবুল ডাক্তার।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য মন্নান মেম্বার জানান, বিনা উসকানিতে বাবুল ডাক্তারের নির্দেশে তার অনুসারী আনোয়ার, কামাল, আল-আমীন, রিয়াজের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন যুবক রাত ৮টার দিকে তার লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে তার লোকজনকে আহত করেছে। এসময় বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর ও একজনের বাড়িতে হামলা করা হয়।
তার লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মন্নান মেম্বার।
এওয়াজ বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও করমুল্লা বাজার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাচ্চু মিয়া ওরফে খোকা মেম্বার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বাবুল ডাক্তার ও মন্নান মেম্বারের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও সিএনজি ভাঙচুর করেছে।’
সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এমদাদুল হক জানান, সংঘর্ষের রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আজ শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা হয়নি।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘হামলায় আহত দুই জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিরা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ রাত থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করে হামলার ইন্দনদাতাদের ও সংঘর্ষকারীদের আটক করতে কাজ করছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে।’
Comments