ট্রাম্পের ‘প্রায়শ্চিত্ত’

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, চলমান ভোট গণনায় ‘জয়’ ধীরে ধীরে তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে, এতে তার কাছ থেকে ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে সিএনএন’র জিম অ্যাকস্ট জানান, ট্রাম্পের এক উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জিমকে পেনসেলভেনিয়ায় ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনার কথাই জোর দিয়ে বলছিলেন। তবে, ভেতরে ভেতরে উপদেষ্টারাও ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, পেনসেলভেনিয়াও তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব নিয়ে হোয়াইট হাউসে এক রকমের ‘বিশৃঙ্খলা’ও চলছে বলে জানান জিম।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন কেউ একজন প্রার্থীর সমর্থনে থাকে, তার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় নিজেকে নিয়োজিত রাখে, তখন ওই প্রার্থীর পরাজয় মেনে নেওয়াটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য বেদনারই। আর এটি আরও বেদনার হয় তার জন্য, যিনি নিজেই প্রার্থী। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এমন অবস্থাই ঘটছে। ভোট গণনা যত শেষের দিকে যাচ্ছে, ট্রাম্পের পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসার সম্ভাবনাও তত ক্ষীণ হচ্ছে।

তবে, ট্রাম্পের এই অবস্থার পেছনে তিনি নিজেই দায়ী বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে ট্রাম্পের দুর্নীতি এবং গণতন্ত্রের প্রতি তার অবজ্ঞামূলক আচরণ।

ডেমোক্রেটের পক্ষ থেকে দলটির সমর্থকদের আগাম ও ডাকযোগের মাধ্যমে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করা হলেও বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রে। তাদেরকে ভোটের দিন কেন্দ্রে যেয়ে ভোট দিতেই উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে বেশিরভাগ রিপাবলিকানই ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। সে কারণেই ভোটের দিনের পরে ডাকযোগে আসা ভোটগুলো গণনা না করার আহ্বানই জানিয়েছেন ট্রাম্প।

নির্বাচনের দিন ভোট গণনার শুরুতে ট্রাম্পই এগিয়ে ছিলেন। পেনসেলভেনিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে পরিকল্পনা মোতাবেকই সব হচ্ছিল। যে কারণে তিনি নিজেকে ‘বিজয়ী’ ঘোষণাও করেছিলেন। পরবর্তীতে আরও লাখো ভোট গণনা চলাকালে তিনি জোর দিয়ে এও বললেন, সেগুলো গণনার মাধ্যমে তার কাছে থেকে নির্বাচন ‘চুরি’ করে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিজেকে ‘বিজয়ী’ ঘোষণার পর থেকে ট্রাম্প যত সম্ভব ডাকযোগে আসা ভোটগুলোর গণনা বাতিল করতে আইনিভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, ট্রাম্প কোনো দিন কল্পনাও করেননি যে, ডাকযোগে আসা এসব লাখো ভোটও গণনা হবে। যার মাধ্যমে ডাকযোগে ভোট পাঠানো লাখো ভোটারের সম্মান রক্ষা পেল। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং আমেরিকার জনগণের স্বার্থে তারা কঠোর পরিশ্রমটি করছেন। যাতে নির্বাচনটি সফল ও সার্থক হয়। বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিকের পছন্দের প্রার্থীই যেন তাদের নেতৃত্বে আসেন।

ডাকযোগে আসা ভোটগুলোর গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ‘জয়’ থেকে দূরে সরে যেতে লাগলেন ট্রাম্প। বিপরীতে ‘জয়’র দিকে এগোতে লাগলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। সবশেষে ট্রাম্প ভেবেছিলেন, আদালতে গেলে রায় তার পক্ষেই আসবে। তার ভাবনার নেপথ্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট তারই মনোনীত। কিন্তু, বর্তমানে পরিস্থিতি ট্রাম্পের অনুকূলে নেই। পেনসেলভেনিয়া ও জর্জিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যেও ট্রাম্পকে পেছনে রেখে ‘জয়’র পথে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেনই। যা ট্রাম্পের জন্য বিশেষ ধরনের ‘প্রায়শ্চিত্ত’ বলেই ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়।

নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন ২৫৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি। তবে, কোনো কোনো গণমাধ্যম অ্যারিজোনায় বিজয় দেখিয়ে বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ২৬৪ দেখিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে এখনো ভোট গণনা চলছে। সেগুলো হলো— পেনসেলভেনিয়া, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলিনা ও আলাস্কা। রাজ্যগুলোতে মোট ৭১টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর ক্যারোলিনা ও আলাস্কা ছাড়া বাকিগুলোতে বাইডেনই এগিয়ে রয়েছেন। উত্তর ক্যারোলিনা ও আলাস্কায় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা যথাক্রমে ১৫টি ও তিনটি।

আরও পড়ুন:

ভোট পুনর্গণনা: কোন রাজ্যের কী নিয়ম?

মার্কিন নির্বাচন: ডেমোক্রেটরা এগিয়ে প্রতিনিধি পরিষদে, সিনেটে রিপাবলিকানদের সম্ভাবনা

ট্রাম্পের ভোটার কারা?

৪ রাজ্যে আরও এগিয়ে বাইডেন

মার্কিন নির্বাচনের ফল ঘোষণায় দেরি কি এবারই প্রথম?

আমরা জয়ের পথে আছি: বাইডেন

ট্রাম্পকে শান্ত থাকার আহ্বান জার্মানির, নীরব যুক্তরাজ্য

জর্জিয়ায় ভোট পুনরায় গণনা হবে

পেনসেলভেনিয়ায় ট্রাম্পকে পেছনে ফেললেন বাইডেন

‘ব্যর্থতার দায় রিপাবলিকানদের “দুর্বল” সমর্থন’

ফিলাডেলফিয়ায় ভোট গণনা কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা, তদন্তে নেমেছে পুলিশ

জর্জিয়া ও পেনসেলভেনিয়াতে হারলে ট্রাম্পের সম্ভাবনা শেষ

২৪ ঘণ্টায় ট্রাম্পের ১৬ টুইট, ৭টিই ‘বিভ্রান্তিকর’

ফিলাডেলফিয়ার ভোট গণনা বন্ধে ট্রাম্পের আবেদন খারিজ

জর্জিয়ায় ৯১৭ ভোটে এগিয়ে বাইডেন: এপি

‘মিথ্যা’ দাবি, ট্রাম্পের সংবাদ সম্প্রচার বন্ধ করে দিলো ৩ টিভি চ্যানেল

‘সহিংস’ বক্তব্যের কারণে ট্রাম্প সমর্থকদের গ্রুপ সরিয়ে ফেলেছে ফেসবুক

হোয়াইট হাউসের আরও কাছে বাইডেন

 

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

15h ago