এক নজরে জো বাইডেন

Joe Biden
জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত নাম জো বাইডেন। কারণ, তিনি হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। মাত্র ২৯ বয়সে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বারাক ওবামার সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা বাইডেন এবার ট্রাম্পকে হারিয়ে নিজেই প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন।

জোসেফ রবিনেট বাইডেন ১৯৪৮ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্ক্রানটন শহরের আইরিশ-ক্যাথলিক পরিবারে বেড়ে ওঠেন।

বাইডেনের বাবা ছিলেন গাড়ি বিক্রেতা। কিন্তু, ১৯৫০ সালে তার চাকরি চলে যায়। এরপর তার বাবা প্রতিবেশী শহর ডেলওয়ারে চলে যান। তখন বাইডেনের বয়স মাত্র ১০ বছর।

বাবাকে নিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমার বাবা সবসময় বলতেন: চ্যাম্প যখন তুমি কোনো কিছু থেকে ছিটকে যাবে, তোমাকে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে।’

তার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ শুরু এই ডেলওয়ার থেকে। তরুণ বয়সে তিনি সেখানের প্রতিবেশী কৃষাঙ্গ পাড়ায় লাইফগার্ড হিসেবে সেবা দিতেন। সেখানে তিনি পদ্ধতিগত বৈষম্যকে খুব কাছ দেখেছিলেন। যা তার রাজনীতিতে আসার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে।

বাইডেন ডেলওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন।

পরিবার

১৯৭২ সালে জো বাইডেনকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয়। তার স্ত্রী নেলিয়া এবং এক বছরের কন্যা নাওমি ক্রিসমাসের কেনাকাটা করতে গিয়ে বাসচাপায় মারা যান। তখন দুই ছেলেকে বাঁচানোর একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি। তবে, ওই দুর্ঘটনায় তার ছেলেরাও আহত হয়েছিলেন।

বাইডেনের দুই ছেলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এক ছেলে বিউ বাবার রাজনীতিতে নামেন। তিনি ডেলওয়ারের অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হনে। কিন্তু, ডেমক্র্যাটের এই উদীয়মান নেতা ২০১৫ সালে ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিউয়ের বয়স হয়েছিলো ৪৬ বছর।

বিউকে হারানোর বেদনা সহজে ভুলতে পারেননি বাইডেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ ছেলে হারানোর শোকে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বাইডেন।

১৯৭৫ সালে জিল জ্যাকবের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় বাইডেনের। এরপর দুই বছর পরেই জিলকে বিয়ে করেন বাইডেন। জিল পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। বাইডেনের আট বছরের ছোট জিল।

১৯৭৭ সালে বিয়ের পর বাইডেনের আগের স্ত্রীর দুই ছেলে হান্টার ও বিউয়ের মা হয়ে ওঠেন জিল। বাইডেনের অ্যাশলে নামে একটি মেয়ে আছে। অ্যাশলে ১৯৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

বাইডেনের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে জিল বাইডেন দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়াও, শিক্ষার ওপর তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। জিল নর্দান ভার্জিনিয়া কমিউনিটি কলেজে পড়াতেন।

২০০৯ সালে জিল বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড লেডির মর্যাদা পান। কারণ, তখন তার স্বামী জো বাইডেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওই সময়টাতে জিল মিশাল ওবামার সঙ্গে অনেক হাই-প্রোফাইল প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। যা তাকে একজন ভালো বক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা করে।

বাইডেনের আরেক ছেলে হান্টার মাদকাসক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালে হান্টার কোকেন পজিটিভ হলে তাকে মার্কিন নৌবাহিনীর রিজার্ভ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন হান্টার।

২০১৪-২০১৯  হান্টার ইউক্রেনীয় গ্যাস কোম্পানি বুরিশমার পরিচালনা বোর্ডের একজন হয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

ট্রাম্প এ বছরের এক বিতর্কে বলেছিলেন, হান্টারকে দুর্নীতি থেকে বাঁচাতে বাইডেন ইউক্রেনের শীর্ষ প্রসিকিউটরকে সরাতে চেয়েছিলেন।

হান্টার অবশ্য ব্যবসায়িক লেনদেন বিষয়ে দুর্বলতার কথা স্বীকার করলেও তিনি কোনো অন্যায় কাজ করেননি বলে দাবি করেন।

সম্পত্তি

জো বাইডেনকে বলা হয় ‘মধ্যবিত্ত জো’। কিন্তু, তিনি একজন কোটিপতি। সরকারি অফিস ছাড়ার পরে বই বিক্রি ও ভাষণ দিয়ে তার আয় আরও বেড়েছে।.

২০১৯ সালে প্রকাশিত আর্থিক নথি অনুসারে, বাইডেন এবং তার স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ছিলো ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

একই বছরে ফোর্বস জানায়, ডেলওয়ারে বাইডেনের দুটি বাড়ির মূল্য প্রায় চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নগদ এবং বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ চার মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এছাড়াও, এক মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি একটি ফেডারেল পেনশনও আছে বাইডেনের।

বাইডেন লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। তিনি ক্যান্সারে মারা যাওয়া ছেলে বিউকে নিয়ে একটি বই লেখেন। যা ২০১৭ সালের বেস্টসেলারের তালিকায় ছিলো। তিনি এবং তার স্ত্রী আরও দুটি বইয়ের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন।

পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেন বাইডেন কেন্দ্রের অধ্যাপক হিসেবে তার আয় ছিলো ৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। অপরদিকে জিল বাইডেন বক্তব্য দিয়ে আয় করেছেন করেন সাত লাখ মার্কিন ডলার।

ধারণা করা হতো জো বাইডেনের একটি ভাষণের ফি এক লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু, ২০১৯ সালে দেখা গেছে তিনি কোথাও কোথাও নিজের ভাষণের জন্য ৪০ হাজার মার্কিন ডলারও নিয়েছেন।

রাজনীতি

১৯৭২ সালে বাইডেন মাত্র ২৯ বছর বয়সে চমক দেখিয়ে ডেলওয়ারের সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। এই বিজয় তাকে জাতীয় রাজনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি সর্বকনিষ্ঠ সিনেটরদের একজন ছিলেন। ওবামার সহকারী হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালনের আগে তিনি ওপরের চেম্বারে তিন দশকের বেশি সময় পার করেছিলেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় তিনি সিনেটর ছিলেন।

১৯৭০ এর মাঝামাঝি সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের সাদা স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ‘বাসিং’ নীতির বিরোধিতা করে তিনি ডেমোক্র্যাটদের নজরে আসেন। 

১৯৯৪ সালের একটি অপরাধ বিলের খসড়া তৈরিতে সহায়তা করে সমালোচনার মুখে পড়েন বাইডেন। অনেক ডেমোক্র্যাট মনে করেন, ওই বিলটি আফ্রিকান আমেরিকানদের অসমানুপাতিক ছিলো। তবে, সম্প্রতি এটিকে ‘ভুল’ বলে অভিহিত করেন।

২০০৩ সালে তিনি ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

১৯৮৭ সালে বাইডেন হোয়াইট হাউজের প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। তখন তার বয়স ছিলো ৪০ বছর এবং তিনি ধীরে ধীরে দলের অনেকের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন।

বারাক ওবামার অধীনে তিনি যুদ্ধ, পররাষ্ট্র এবং আর্থিক নীতির মত অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সমাধানকারী হিসেবে কাজ করতেন।

তবে, ওবামা সবসময় বাইডেনের উপদেশ শোনেননি। বাইডেনের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ওবামা ২০১১ সালে পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Muhammad Yunus yesterday instructed all relevant authorities to complete preparations by December for the upcoming national election.

34m ago