লালমনিরহাটে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা: আরও ২ আসামি গ্রেপ্তার, ৩ জনের দায় স্বীকার

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে শহীদুন্নবী জুয়েল (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আরও দুই জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে পাটগ্রাম এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত।
ফাইল ফটো সংগৃহীত

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে শহীদুন্নবী জুয়েল (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আরও দুই জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে পাটগ্রাম এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত।

গ্রেপ্তার দুই জন হলেন— পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী এলাকার রবিউল ইসলাম ও সুজন ইসলাম। ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে ছিলেন।

জুয়েল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. মাহমুদুন্নবী দ্য ডেইলি স্টারকে আজ সকালে জানান, জুয়েল হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন হত্যা মামলার আসামি। যার মধ্যে মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী, মেহেদী হাসান রাজু ও আব্দুল গনি কবিরাজ ইতোমধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মাহমুদুন্নবী জানান, মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী ও মেহেদী হাসান রাজু রিমান্ডের পর দায় স্বীকার করেছেন। আর আব্দুল গনি কবিরাজ রিমান্ড ছাড়াই দায় স্বীকার করেছেন। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসী বেগম।

তিনি আরও জানান, ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া মামলার প্রধান আসামি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন আলীকে আজ আদালতে সোর্পদ করা হবে। গ্রেপ্তারের পর তাকে পাটগ্রাম থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। আদালতে স্বীকারোক্তির পর তথ্যগুলো প্রকাশ করা হবে।

মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন, নিহত জুয়েলের অসংলগ্ন কথার কারণে মসজিদের ভেতর তর্কাতর্কি হয়। তাকে মসজিদের বাইরে বের করে পেটানো হয়। সেখানে কোরআন অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে কোরআন অবমাননা গুজব ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

মেহেদী হাসান রাজু দায় স্বীকারে বলেছেন, তিনি পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজবে বিশ্বাস করে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের মতো তিনিও জুয়েলকে পিটিয়েছেন। সেদিন বুড়িমারী বাজারে সবার মুখে শ্লোগান ছিল, ‘তাকে মেরে ফেলো, তাকে জ্বালিয়ে দাও।’

অপর দায় স্বীকারকারী আব্দুল গনি কবিরাজ জানান, কোরআন অবমাননার গুজবকে বিশ্বাস করে তিনিও জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। জুয়েলকে পিটিয়েছেন এবং পুড়িয়েছেন। আব্দুল গণি কবিরাজের বাড়ি কক্সবাজারে। ২০ বছর আগে তিনি বুড়িমারীতে এসে বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন।

গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী বুড়িমারী বাজারে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে গত্যা করা হয়। নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন:

লালমনিরহাটে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার আরও ৪

লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার আরও ৬

জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার আরও ৫

কোরআন অবমাননার প্রমাণ পায়নি মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি

লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি

জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ মামলা, গ্রেপ্তার ৫

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago