এখনও হয়নি স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
নভেম্বর মানেই বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করতে অভিভাবকদের দৌড়ঝাঁপ আর উদ্বেগ শুরু। রাজধানীর বেশিরভাগ নামীদামী স্কুলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় ভর্তি প্রক্রিয়া।
এ বছর অভিভাবকদের উদ্বেগটা রয়ে গেছে, তবে নেই দৌড়ঝাঁপ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্কুল ভর্তির বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছে এবং এক অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে।
ছয় বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর বাবা রিয়াসাত আলম বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে তিনটি স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সবাই জানিয়েছে যে তারা এখনও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এ ব্যাপারে তারা এখনই সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারবেন না এবং কী হবে জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছেন।’
প্রতি বছরই ভালো স্কুলগুলোতে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের চাপ। ফলে, ভর্তির দৌড়ে সন্তানদের উত্তীর্ণ করাতে উদ্বিগ্ন থাকেন অভিভাবকরা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রিয়াসাত বলেন, ‘শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। এই আশঙ্কা যদি সত্য হয়, তাহলে কী হবে জানি না। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’
রিয়াসাতের মতো হাজারো অভিভাবক উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষায় থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোর কোনোটিই এখনও ভর্তি ফরম বিক্রি ও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
ভর্তির বিষয়ে এ বছর এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।’
এই স্কুলে প্রায় এক হাজার ৪০০ আসন রয়েছে।
গত বছর সরকারি স্কুলগুলো ১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি ফরম বিতরণ করেছে। ২৪ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণির লটারি এবং ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ক্লাসের জন্য ভর্তি পরীক্ষা হয়।
ঢাকার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে আমরা এখনও আলোচনা শুরু করতে পারিনি।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। স্কুলগুলোতে আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থীই ভর্তি করে নেওয়া হয় এবং কোনও ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সারাদেশে ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৭১৩ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকা জেলার স্কুলগুলোতে ভর্তি হয়েছিল এক লাখ ৮৭ হাজার ১৮৮ জন।
সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে, যেখানে প্রাথমিক স্কুলও আছে, শিক্ষার্থী ভর্তি করার প্রতিযোগিতা রয়েছে। এই সরকারি স্কুলগুলোর প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৭১ হাজার ২৬৩টি আসনের বিপরীতে ভর্তি ফরম বিক্রি হয়েছে প্রায় পৌনে চার লাখ।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ২৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭ জন শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, যার মধ্যে ঢাকা জেলার এক লাখ ১০ হাজার।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গতকাল মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দূরত্ব বজায় রেখে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তারা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুখোমুখি এবং অনলাইন পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছি। এমসিকিউ এর মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষাও একটি বিকল্প উপায়। তবে এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে কাজ করছি।’
তিনি জানান, সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির গাইডলাইন ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
Comments