পদ্মা সেতুর ৫ হাজার ৫৫০ মিটার দৃশ্যমান

পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ৩৭তম স্প্যান। এর মাধ্যমে ছয় হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুর পাঁচ হাজার ৫৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বসানো বাকি থাকলো আর চারটি, যাতে দৃশ্যমান হবে ছয় শ মিটার।
পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ৩৭তম স্প্যান। ছবি: স্টার

পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে ৩৭তম স্প্যান। এর মাধ্যমে ছয় হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুর পাঁচ হাজার ৫৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বসানো বাকি থাকলো আর চারটি, যাতে দৃশ্যমান হবে ছয় শ মিটার।

৩৬তম স্প্যান বসানোর ছয় দিনের মাথায় বসানো হলো ৩৭তমটি। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় চার ঘণ্টায় সফলভাবে কার্যক্রম শেষ হয়। ‘টু-সি’ নামের এ স্প্যানটি বসানো হয় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের নয় ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর। চলতি মাসে সেতুতে আরও দুইটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে প্রকৌশলীদের। মূল সেতুর কাজ শতভাগ সম্পন্ন করতে সময় আছে আরও ৭ মাস ১৮ দিন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে স্থায়ীভাবে ৩৭তম স্প্যানটি দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর বসানো হয় বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের।

এর আগে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটিকে বহন করে রওনা দেয় ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেনটি। তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছায় ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে। ইয়ার্ড থেকে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে নয় ও ১০ নম্বর পিলারের কাছে আসতে। এরপর শুরু হয় নোঙর ও পজিশনিং করার কাজ।

স্প্যান বসানোর কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীরা জানান, নয় ও ১০ নম্বর পিলারের অবস্থান মূল নদীতে। স্প্যানটিকে পিলারের ওপর বসানোর জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেনটিকে চারটি ক্যাবল (তার) দ্বারা চারদিকে বেঁধে দেওয়ার কাজটি ছিল কঠিন। দেশি ও বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলীরা সফলভাবে এ নোঙরের কাজটি করেন। এরপর দুই পিলারের মাঝামাঝি এসে ভাসমান ক্রেনটি সুবিধাজনক পজিশন করে। এরপর ক্রেনের সহায়তায় ধীরে ধীরে স্প্যানটিকে পিলারের উচ্চতায় তোলার কাজ শুরু হয়। তারপর দুইটি পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্প্যানটিকে রাখা হয়। এ ছাড়া, আট ও নয় নম্বর পিলারের স্প্যানটির সঙ্গে জোড়া দেওয়ার কাজ চলবে কয়েকদিন ধরে। গেল মাসে সেতুতে চারটি স্প্যান স্থাপন সফলভাবে হওয়ায় কাজের গতি নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকৌশলীরা।

তারা আরও জানান, স্প্যান বসানোর সময় যাতে কোনো নৌযান বিঘ্ন সৃষ্টি না করে, সেদিকে দৃষ্টি রাখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। স্পিডবোটের মাধ্যমে তারা নৌযানগুলোকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য নজরদারি করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল। এরপর ধাপে ধাপে স্প্যান বসিয়ে ৩৭ পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে তিন বছর এক মাস ১২ দিন। চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই স্প্যান বসানোর কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সংশোধিত সময় অনুযায়ী মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে ২০২১ সালের ৩০ জুন। অবশিষ্ট চারটি স্প্যানের মধ্যে এ মাসে দুইটি ও ডিসেম্বর মাসে দুইটি বসানোর পরিকল্পনা আছে প্রকৌশলীদের। এর মধ্যে ১৬ নভেম্বর এক ও দুই নম্বর পিলারে ৩৮তম স্প্যান (১-এ), ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারে ৩৯তম স্প্যান (২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে ৪০তম স্প্যান (২-ই) এবং ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (২-এফ) বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর। তবে, স্প্যান বসানোর এ শিডিউল দু-একদিন আগে-পরেও হতে পারে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতুর চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। নদীশাসন কাজের চুক্তিমূল্য আট হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৪৯৯ দশমিক ৫১ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ, পুর্নবাসন ও পরিবেশ খাতে মোট বরাদ্দ চার হাজার ৩৪২ দশমিক ২৬ কোটি টাকা। অন্যান্য খরচ যেমন: পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট, আয়কর, যানবাহন, বেতন, ভাতাদি অন্যান্য খাতে বরাদ্দ তিন হাজার ৫১০ দশমিক ৪২ কোটি টাকা।

সেতুতে মোট ৪২ পিলারে বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এ ছাড়া, দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানোর কাজ চলমান আছে। মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে চারটি স্প্যানের মধ্যে শুধু দুইটির পেইন্টিংয়ের কাজ বাকি আছে।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

আরও পড়ুন:

পদ্মা সেতুতে ৩৭তম স্প্যান বসানোর কাজ চলছে

Comments