নাগরনো-কারাবাখ ‘শান্তি চুক্তি’র মূল শর্ত

শান্তিচুক্তিতে সই করায় আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ানেরর পদত্যাগ চেয়ে রাজধানী ইরেভানে বিরোধীদের বিক্ষোভ। ১১ নভেম্বর ২০২০। ছবি: রয়টার্স

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। স্বাধীন হওয়ার পর পরই প্রতিবেশী দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানি অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠী-প্রধান নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলকে নিয়ে।

প্রায় ৩০ বছর পর নাগরনো-কারাবাখকে নিয়ে দেশ দুটি আবারও বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ায় গত সেপ্টেম্বরে। আর্মেনিয়া প্রথম যুদ্ধে নাগরনো-কারাবাখসহ আজারবাইজানের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল দখল করে নিলেও সাম্প্রতিক যুদ্ধে আজারবাইজান তার হারানো ভূমির ১৫ থেকে ২০ শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে বলে দাবি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শুশা শহরও রয়েছে।

দ্বিতীয়বারের বড় যুদ্ধ শুরু পর থেকেই শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছিল বিশ্ব সম্প্রদায়। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে বিবাদমান দুই পক্ষকে প্রাথমিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করায় রাশিয়া।

এরপর গত মঙ্গলবার রাশিয়া-প্রস্তাবিত নয়-দফা শান্তি চুক্তিতে রাজি হয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। সেই চুক্তিতে সই করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান।

চুক্তি মোতাবেক নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে চলমান যুদ্ধ বন্ধ ও সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলটিতে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির পথ খুঁজে বের করতেও রাজি হয়েছে উভয় পক্ষ।

সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ আরব’র এক প্রতিবেদেন নাগরনো-কারাবাখ শান্তিচুক্তির মূল শর্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি

চুক্তির মূল শর্তগুলোর প্রথমেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি। মঙ্গলবার মস্কোর স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছে।

বর্তমানে দুই দেশের সেনারা যে ভূমিতে অবস্থান করছেন তারা সেখানেই থাকবেন। এর ফলে, সাম্প্রতিক যুদ্ধে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া শুশা শহরসহ অন্যান্য এলাকায় আজারবাইজান অবস্থান করবে।

শান্তিরক্ষী বাহিনী

বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে রাশিয়ার ১ হাজার ৯৬০ জন সেনা মোতায়েন করা হবে। তাদের সঙ্গে থাকবে ছোট অস্ত্র, ৯০টি আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার, ৩৮০ ইউনিট অটোমোবাইল ও বিশেষ যন্ত্র।

শান্তিরক্ষীরা দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অবস্থান করবেন। এছাড়াও, আর্মেনিয়ার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টিকারী লাচিন করিডোরের নিরাপত্তা দিবেন।

কোনো পক্ষ চুক্তি থেকে সরে না গেলে এই স্থিতাবস্থা আগামী পাঁচ বছর চলবে। পাঁচ বছর পর চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলবৎ হবে।

ভূমি ফেরত

আর্মেনিয়া আগামী ২০ নভেম্বর আঘদাম জেলা আজারবাইজানের কাছে ফেরত দেবে। এছাড়াও, আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা কালবাজার জেলা আগামী ১৫ নভেম্বর ও লাচিন জেলা আগামী ১ ডিসেম্বর আজারবাইজানের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

আগে শুশার মধ্য দিয়ে নাগরনো-কারাবাখের সঙ্গে যোগাযোগ করতো আর্মেনিয়া। এখন তারা পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত লাচিন করিডোর দিয়ে সেই যোগাযোগ রক্ষা করবে।

বন্দি বিনিময়, শরণার্থী প্রত্যাবাসন

যেসব অঞ্চল আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানে ও এর আশেপাশের জেলাগুলোতে শরণার্থীরা ফিরে আসতে পারবেন।

বিবাদমান দুই পক্ষই একে অপরের হাতে থাকা যুদ্ধবন্দি, আটক ব্যক্তি ও মরদেহ বিনিময় করবে।

করিডোর

মূল ভূমি থেকে দূরে আজারবাইজানের নাখচিভান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে যাতায়াত করতে নিজেদের ভূমি ব্যবহার করার অনুমতি দিবে আর্মেনিয়া। যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরির ব্যবস্থা নিতেও কাজ করবে দেশটি।

চুক্তিতে মূল শর্ত হিসেবে এগুলো উল্লেখ করা হলেও নাগরনো-কারাবাখের আর্মেনীয়-প্রধান এলাকাগুলোর ভবিষ্যত পরিচয় কী হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্যে ভবিষ্যতে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

12h ago