গণপরিবহনের চালক মাদকাসক্ত কিনা পরীক্ষা করবে বিআরটিএ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহন শ্রমিকদের ডোপ টেস্টিং বা মাদকাসক্তি পরীক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনার পরিকল্পনা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় মাদকাসক্তিকে।
বিপুল সংখ্যক গণপরিবহন চালককে ডোপ টেস্টের আওতায় আনার উপায় খুঁজতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আজ বৃহস্পতিবার এক সভা ডেকেছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে পুলিশ কর্মকর্তাসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের উপায় বের করার জন্য এটি একটি প্রস্তুতিমূলক সভা।’
পরবর্তীতে তারা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং মাদক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি কীভাবে পরীক্ষা চালানো যেতে পারে তা নির্ধারণ করার জন্য কথা বলবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আরও বৈঠক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বিষয়টিতে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
গত ২২ অক্টোবর জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য প্রদানকালে শেখ হাসিনা চালকদের ডোপ টেস্টিং ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যারা গাড়ি চালাচ্ছে তারা মাদক গ্রহণ করে কি না। তাদের ডোপ টেস্ট করা প্রয়োজন। তারা মাদক নিচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রতিটি চালকের জন্য একবার হলেও এই পরীক্ষার প্রয়োজন আছে এবং আপনাদের এটি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
নির্দেশাবলী কার্যকর করতে গত ২৭ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে এবং বিআরটিএকে এ বিষয়ে একটি সভা আহ্বান করতে বলা হয় বলে সূত্র জানায়।
কেন ডোপ টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. শিফুন নেওয়াজ জানান, মাদক সেবন করার পর কোনও চালক নিস্তেজ হয়ে পড়তে পারেন এবং স্টিয়ারিংয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন। এর ফল হতে পারে দুর্ঘটনা।
তিনি আরও জানান, মাদক গ্রহণের পর অনেক ক্ষেত্রেই চালক অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকে বিপজ্জনকভাবে অন্যান্য যানবাহনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করতে পারেন।
গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডোপ টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ। যাতে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা বা অ্যালকোহলে নেশায় থাকা কোনও চালক গাড়ি চালাতে না পারেন।’
গত বছর এ বিষয়ে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। একজন পরিবহন নেতা বলেছিলেন, কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মোটর গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্ট শুরু করবে।
গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে একটি যৌথ বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত এই অভিযান পরিচালনা করবে। ধারণা করা হয়, রাজধানীর গণপরিবহনের চালকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন মাদকে আসক্ত এবং মাদকাসক্তিই রাজধানীতে দুর্ঘটনার প্রথম ও প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাস মালিক, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এবং মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে এটা জানতে পেরেছি।’
তিনি জানান, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে সদিচ্ছা থাকার পরও তারা ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
Comments