যে গ্রামে ১২ মাস শুটিং চলে!

ভাদুনের একটি শুটিং বাড়িতে নাটকের শুটিং হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে এমন একটি গ্রাম আছে-যেখানে সারাবছর শুটিং চলে! গ্রামটির আগের নাম বদলে এখন অনেকেই শুটিং গ্রাম বলে থাকেন! আশপাশের দশ গ্রামের মানুষও এখন এই গ্রামকে শুটিং গ্রাম হিসেবেই চেনে। বছরের বারো মাস সেখানে শুটিং চলে।

এই গ্রামটির আসল নাম ভাদুন। ইউনিয়নের নাম পূবাইল। এক বছর হলো থানা হয়েছে পূবাইল। তবে, পূবাইল ইউনিয়ন আছে এখনো। এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে শুটিং চলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুটিং হয় ভাদুন গ্রামে।

ভাদুনের একটি শুটিং বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

এখানে আবারও আগের ব্যস্ততার চিত্র ফুটে উঠছে। শুটিংবাড়িগুলোতে আবারও শুটিং শুরু হয়েছে কিছুদিন ধরে। সকাল-সন্ধ্যা শুটিং চলছে। কখনো কখনো রাতেও।

পূবাইল ইউনিয়নের হারিবাড়িটেক গ্রামে আছে তিনটি শুটিং বাড়ি। একটি বাড়ির নাম হাসনাহেনা, একটির নাম-কৃঞ্চচূড়া, অপরটির নাম জান্নাত। জান্নাত শুটিং হাউজটির মালিক চিত্র নায়ক শাকিব খান।

হাসনাহেনা শুটিং হাউজে বছর ধরেই শুটিং চলে। এই বাড়িটি অনেক পরিচালক ও তারকার পছন্দের তালিকায় আছে। হাসনাহেনার ম্যানেজার মুসা মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাসনাহেনায় আছে বিশাল জায়গা। অনেকগুলো বাড়ি আছে ভেতরে। গাছগাছালিও আছে। পুকুর আছে। বাড়িটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এজন্যই পরিচালক ও শিল্পীরা বাড়িটি পছন্দ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূবাইলের ভাদুন গ্রামে শুটিং শুরু হয় আজ থেকে ২৩ বছর আগে। প্রখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেন তার পরিচালিত একটি নাটকের শুটিং করার জন্য লোকেশন দেখতে বের হয়েছিলেন সেই সময়ে। যেতে যেতে ভাদুন গ্রামে যান। গ্রামটি ভালো লেগেও যায়।

শুটিং বাড়িতে শুটিং চলছে। ছবি: সংগৃহীত

গ্রামটি আসলে ভালো লাগার মতোই। গাছগাছালি যেমন আছে, খাল বা ঝিলও আছে। তারপর আমজাদ হোসেন ২৩ বছর আগে ভাদুন গ্রামে শুটিং করেন ধারাবাহিক নাটক-আগুন লাগা সন্ধ্যা। নাটকটি তখন একুশে টেলিভিশনে প্রচার হয়েছিল।

এভাবেই ২৩ বছর আগে শুটিং শুরু হয়। কিন্তু, গ্রামটিতে গ্রামীণ নাটকের জন্য সবচেয়ে বেশি শুটিং করেছেন পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু। অনেকের মতে, সালাহউদ্দিন লাভলুর গ্রামীণ নির্ভর গল্পের নাটকের শুটিংয়ের কারণেই গ্রামটির পরিচিতি বেশি আসে। একটা সময়ে মাসের পর মাস লাভলু এ গ্রামে শুটিং হাউজ ভাড়া করে থেকেছেন এবং বড় বড় ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেছেন।

সালাহউদ্দিন লাভলু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে পূবাইলের ভাদুন গ্রামে কতগুলো নাটক করেছি তার সঠিক সংখ্যা বলাটা কঠিন! ধারাবাহিক নাটকই বেশি করেছি। তার মধ্যে সাকিন সারিসুরি, আলতা সুন্দরী অন্যতম।

পরিচালক ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘একটি গ্রাম কীভাবে শুটিং করার কারণে সবার কাছে পরিচিতি পায় তার বড় উদাহরণ ভাদুন গ্রামটি। শুটিং করার কারণে অনেকের রুটি রুজির ব্যবস্থাও হয়েছে। আমার পরিচালনা জীবনে বেশিরভাগ গ্রামীণ গল্পের নাটক এর শুটিং করেছি এ গ্রামে।’

২৩ বছর আগে ভাদুনে শুটিং শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে গ্রামটির পরিচিতি লাভ করার পর অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে শুটিংয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য বাড়ি বানান। এভাবে ওই গ্রামে এখন বিশটিরও বেশি শুটিং বাড়ি আছে।

গ্রামের মাটির ঘরের আছে বেশ চাহিদা। কেননা- এখন মাটির ঘর নেই বললেই চলে। ভাদুন গ্রামে আছে কিছু মাটির ঘর। একটি রয়েছে বাদশার। তাকে সবাই বাদশা ভাই নামে চেনেন। এই বাদশা ভাই মাটির ঘরসহ একটি শুটিং বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘মাটির ঘরের প্রয়োজন হলেই আমার বাড়িটি ভাড়া দিতে পারি। মাটির ঘরের ওপর টিনের চালা, এই ঘরের চাহিদা অনেক।’

ভাদুনে আরও আছে শাহীনের বাড়ি, হারুনের বাড়ি, মেঘলা আকাশ, বিলবিলাইসহ অনেকগুলো বাড়ি। আসলে যার যার নামে শুটিং বাড়িগুলো পরিচিতি পেয়েছে। হারুনের বাড়ি, শাহীনের বাড়ি এগুলো বেশ পুরনো।

অভিনেতা শামীম জামান, আখম হাসান ও মোশাররফ করিম মিলে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজেরাই শুটিং করেন এবং অন্যদের নাটকের জন্যও ভাড়া দিয়ে থাকেন। এটি তিন বন্ধুর শুটিং বাড়ি নামে পরিচিত।

শামীম জামান বলেন, ‘আসলে আমি পরিচালনার পাশপাাশি প্রযোজনাও করি। যার জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ করলে খরচ কিছুটা কমে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকালে শুটিং ভাড়ার জন্য চাহিদা কমে গেছে।’

ভাদুনের বেশিরভাগ বাড়ির মালিক ও ম্যানেজারদের একই ভাষ্য, করোনাকালে শুটিং হাউজগুলোর চাহিদা কমে গেছে। তবে, এ রকম অবস্থা থাকবে না বলে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে ভাদুন গ্রামের শুটিং হাউজগুলোর খোঁজ নিতে গ্রামটিতে সারাদিন কাটাতে কাটাতে অনেক তারকার সঙ্গে দেখাও হয়ে যাই।

Comments

The Daily Star  | English
Kamal Hossain calls for protecting nation

Kamal Hossain urges vigilance against obstacles to nation-building effort

"The main goal of the freedom — gained through the great Liberation War — was to establish democracy, justice, human rights and build a society free from exploitation. But we have failed to achieve that in the last 54 years," says Dr Kamal

1h ago