ফেলুদা কিংবা অপু, দেবদাস হয়েই বেঁচে থাকবেন সৌমিত্র
সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’। ফেলুদাকে ক্যামেরায় বন্দি করার পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বনে যান ফেলুদা। সেই থেকে আজও দুই বাংলার মানুষের মনে ফেলুদা হয়ে আছেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা-আবৃত্তিকার-পরিচালক।
শুধু কি ফেলুদা? ‘অপুর সংসার’ সিনেমা করে দর্শকদের হৃদয়ে আজও অপু হয়ে হয়ে আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৮৬ বছরের জীবন কাটানোর পরও তিনি অনেকের কাছে অপু।
এমন কতোই না চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন আরেক কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের বিপরীতে। ‘চারুলতা’ নামের বিখ্যাত সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। এটিও সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায়।
আশির দশকের শুরুতে তিনি ‘দেবদাস’ সিনেমায় অভিনয় করে সবার কাছে দেবদাস বনে গিয়েছিলেন।
সৌমিত্র ও সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে বিশাল সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছিল। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত ১৪টি সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ ঘটেছিল তার।
খ্যাতিমান এই শিল্পীকে হারিয়ে কাঁদছেন দুই বাংলার মানুষ। তার ভক্তের শেষ নেই। দুই বাংলার শোবিজ অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা ১৯৭৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অভিনয় করেছিলেন ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায়। যেখানে ববিতা নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।
ববিতা বলেন, ‘খুব আশা করেছিলাম অলৌকিক কিছু একটা হবে। তা আর হলো না। এতো ভালো একজন মানুষ, তাকে চিরতরে হারালাম। অশনি সংকেত সিনেমাটি করার পর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এ দেশে এলেও দেখা হতো, কথা হতো। কাজের ক্ষেত্রে এবং ভালো মানুষ হিসেবে তার জুড়ি নেই। আজ খুব করে অশনি সংকেত সিনেমার শুটিংয়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে।’
অভিনেতা তারিক আনাম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের অভিনয়ের শিক্ষক। তার অভিনয় মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। অপু বলি, ফেলুদা বলি কিংবা দেবদাস বলি- সবই তিনি। তার অভিনয়ের কাছে শত বছর ঋণী হয়ে রইলাম।’
আসাদুজ্জামান নূর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একটি বটবৃক্ষের বিদায় ঘটল। একটি মহীরুহের বিদায় ঘটল। বটবৃক্ষটি হলো অভিনয়ের। অভিনয়ের জাদুকরী ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছিলেন তিনি। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। পর পারে ভালো থাকুন।’
মামুনুর রশীদ আজ সারাদিন মন খারাপ করে আছেন। তার ভাষ্য, ‘ভেবেছিলাম সৌমিত্র বাবু ফিরে আসবেন। তা আর এলেন না। তার নিখুঁত অভিনয় আমাকে কতোটা টানতো, তা বলে বোঝানো যাবে না। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
৬০ এর দশকের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুজাতা আজিম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শিল্পীর কোনো দেশ নেই, শিল্পীর কোনো সীমানা নেই, শিল্পী সবার। শিল্পীর জন্য মন কাঁদাটাই স্বাভাবিক।’
নায়ক ফেরদৌস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবরটি শোনার পর থেকেই মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে। বহু বছর আগে তার অভিনীত দেবদাস সিনেমাটি দেখেছিলাম। এ ছাড়া, আমার চোখে ফেলুদা বলতে তিনিই। ফেলুদার কোনো মৃত্যু নেই।’
আরও পড়ুন:
তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অতি উচ্চ মানের: গৌতম ঘোষ
বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই নক্ষত্রপতনে: অপর্ণা সেন
তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক: ববিতা
Comments