বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই নক্ষত্রপতনে: অপর্ণা সেন
‘আমার সঙ্গে সৌমিত্র বাবুর পরিচয় সেই ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে। আমাদের সম্পর্ক ছিলো পারিবারিক। তিনি আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমার বাবা-মাকে দাদা-বৌদি বলে ডাকতেন। আমাকে খুব একটা পাত্তা দিতেন না। আমাকে ছোট মানুষ ভাবতেন। তারপর ধীরে ধীরে অনেক ছবি আমরা একসঙ্গে করলাম। আমরা ধীরে ধীরে ভালো বন্ধু হলাম।’
কথাগুলো বলছিলেন ভারতের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অপর্ণা সেন। এভাবেই দ্য ডেইলি স্টারের কাছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে হারানোর অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।
অপর্ণা সেন বলেন, ‘সাহিত্য, চলচ্চিত্র, কবিতাসহ কতো কিছু নিয়ে আমরা দিনের পর দিন আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখিয়েছেন। আমি বিশেষ করে বলব সিনেমার শুটিংয়ে ফুটওয়ার্ক। কীভাবে পায়ের মুভমেন্ট হবে সেটি তিনি আমাকে এতোটা যত্ন করে শিখিয়েছেন যে, পরবর্তীতে যখন আমি পরিচালক হলাম, আমার খুব কাজে লাগল।’
‘তিনি আরেকটা জিনিস আমাকে শিখিয়েছেন, তা হলো- যন্ত্র অভিনয়ে সহায়ক। তাকে বন্ধু মনে করো, শত্রু না। মাইক্রোফোন, লাইট, ক্যামেরা এসব তোমার অভিনয়ের অর্ধেক আর বাকী অর্ধেক তোমার স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়। আর এভাবেই একেকটা শট কালজয়ী হয়ে উঠে’, বলেন তিনি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘উনি খুব নিয়ম করে কাজ করতেন। কাজের সময় একটি খেরোখাতা ব্যবহার করতেন দেখতাম। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে তিনি ছবি আঁকছেন, কবিতা লিখছেন কিংবা পরবর্তী শটের কোনো দৃশ্য আঁকছেন।’
তিনি বলেন, ‘বহমান ছবির একটি দৃশ্যে দুজন বসে আছি অক্সফোর্ডের এক কফি শপে। দৃশ্যে কোনো সংলাপ নেই। আমি একটা বই দেখিয়ে বললাম পড়েছেন? উনি বললেন না। আমি নিচে গিয়ে বইটি কিনে এনে দিলাম। উনি এতো খুশি হলেন!’
অপর্ণা সেন বলেন, ‘চলচ্চিত্র অঙ্গনে এতো বহুমুখী প্রতিভা খুবই কম। তিনি কবিতা লিখতেন, আবৃত্তি করতেন, নাটক লিখতেন, পরিচালনা করতেন, অভিনয় করতেন। তিনি বাংলা সংস্কৃতিকে অশেষ দানে ভরিয়ে দিয়েছেন। আকাশ তার সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি হারাল। বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই নক্ষত্রপতনে।’
আরও পড়ুন:
তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অতি উচ্চ মানের: গৌতম ঘোষ
তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক: ববিতা
ফেলুদা কিংবা অপু, দেবদাস হয়েই বেঁচে থাকবেন সৌমিত্র
Comments