তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অতি উচ্চ মানের: গৌতম ঘোষ

গৌতম ঘোষ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সংস্কৃতির অভিভাবক। এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমার থেকে বয়সে বড় ছিলেন তিনি। ডাকতাম দাদা বলে, কিন্তু সম্পর্কটা ছিল বন্ধুর মতো।’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন গৌতম ঘোষ।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এই বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক বলেন, ‘তিনি এত খাঁটি মানুষ ছিলেন, যা বিশ্বাস করতেন তাই বলতেন। কোনও ধরনের গোঁজামিল বা গোঁড়ামি পছন্দ করতেন না। তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অতি উচ্চ মানের। কী সাহিত্য, কী চলচ্চিত্র, কী থিয়েটার-- কোথায় ছিলেন না তিনি।’

গৌতম ঘোষ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

গৌতম ঘোষ পরিচালিত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত কালবেলা সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত নিরহংকারী মানুষ ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত বিখ্যাত মানুষ, এত যশ-খ্যাতি ছিল কিন্তু তিনি সব সময় মাটিতে পা রাখতেন। যশ-খ্যাতি বা জনপ্রিয়তাকে তিনি গায়ে মাখেননি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে তার সঙ্গে চারটি ছবি করার। যতবার শট নিতেন প্রতিবারই বলতেন, “কি গৌতম হলো?” আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ দাদা পারফেক্ট। তিনি বলতেন, “দেখো, যদি না হয়ে থাকে তবে আরেকবার টেক করো।”’

গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘দেখা’, ‘আবার অরণ্যে’, ‘কালবেলা’ ও ‘শূণ্য অঙ্ক’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভীষণ পরিশ্রমী ছিলেন জানিয়ে কালবেলা সিনেমার পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সেই গুনটাই তাকে এত বড় অভিনেতা করেছে বলে আমি মনে করি। প্রতিটা শট তিনি আগে থেকে হোমওয়ার্ক করে নিতেন। যার কারণে টেকনিক্যাল কোনও সমস্যা না থাকলে একটা বা দুটো টেকে শট হয়ে যেতো।’

‘সৌমিত্র দার আরেকটা গুন হলো তিনি ভীষণ রসিক ছিলেন। তার সেন্স অব হিউমার ছিল অসাধারণ। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে সেটের সবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিতেন। এত বড় মাপের অভিনেতা হয়েও একদম টি বয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া, ঘণ্টা ধরে আড্ডা দেওয়া- সেটা অতি উচ্চ মানের মানুষ না হলে সম্ভব না,’ বলে যোগ করেন তিনি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘একটা গল্প বলি। একবার যাচ্ছি একটি ফিল্ম ফেস্টিভালে যোগ দিতে। আমরা দিল্লী থেকে ফ্রান্সে পৌঁছলাম। আমি আর সৌমিত্র দা দুজনেই তখন প্রচুর ধূমপান করি। ফ্রান্সে নেমেই তিনি বললেন, “চলো তাড়াতাড়ি একটা সিগারেট খেয়ে নেই।” আমি বললাম, আগুন পাবো কোথায়। সব তো লাগেজে দিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, “চলো তো আগে।” তিনি মোজার মধ্যে থেকে দুটো দেশলাই কাঠি আর ম্যাচ বক্সের বারুদের একটা টুকরা বের করে ঠাস করে সিগারেট ধরিয়ে ফেললেন।’

‘তিনি মারা গেছেন এটা আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার এতটা খারাপ লাগছে যে আমি তার মরদেহটা দেখতে যাইনি। এত দিন ভরসা ছিল যে তিনি আমাদের মাথার ওপরে আছেন। আজ থেকে সেটা সরে গেল।’

আরও পড়ুন:

বাঙালির ‘কালচারাল আইকন’

বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই নক্ষত্রপতনে: অপর্ণা সেন

তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক: ববিতা

ফেলুদা কিংবা অপু, দেবদাস হয়েই বেঁচে থাকবেন সৌমিত্র

আলোকিত শিল্পী সৌমিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

2h ago