বাঙালির ‘কালচারাল আইকন’

নিজেকে কোনো গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করেননি সৌমিত্র। তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে বাঙালির ‘কালচারাল আইকন’।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি

৮৫ বছরে ইতি হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের।

আচ্ছা ঠিক কী কী পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন এই খ্যাতিমান বাঙালি—মহাতারকা, অভিনেতা, নাট্যকার, বাচিকশিল্পী কিংবা কবি—চোখ বুজলেই আসলে কোন ছবিটা ভেসে ওঠে তাকে নিয়ে অপু, ফেলু মিত্তির, অশনি সংকেত-এর পণ্ডিতমশাই না হীরকরাজ্যের উদয়ন পণ্ডিত?

নাকি কানে বেজে ওঠে...

তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান;

গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।

হে বন্ধু, বিদায়।

কিংবা

মৃত্যু আয় তোর সঙ্গে তিন পাত্তি খেলি আয়

অথবা

আমাদের গেছে যে দিন

একেবারেই কি গেছে,

কিছুই কি নেই বাকি।

একটুকু রইলেম চুপ করে;

তারপর বললেম,

রাতের সব তারাই আছে

দিনের আলোর গভীরে।

আসলে নিজেকে কোনো গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করেননি সৌমিত্র। তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে বাঙালির ‘কালচারাল আইকন’।

সৌমিত্রের মাপের একজন নায়কের কথা উঠলেই স্বাভাবিকভাবে একজন নায়িকার নাম আসা উচিত ছিল।

কিন্তু সৌমিত্রের নামের সঙ্গে নিদিষ্ট করে কোনো নায়িকার নাম আসে না, কারণ তিনি অবলীলায় কাজ করেছেন সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী, সুপ্রিয়া, মাধবী, শর্মিলা, অপর্ণা সেনদের সঙ্গে। তিনি সবারই নায়ক।

অভিনয়ের পাশাপাশি একমাত্র সৌমিত্রই কাজী সব্যসাচী এবং শম্ভু মিত্রের পর নিজের ভরাট উদাত্ত কণ্ঠস্বরে নিজের আলাদা স্থান করে নিয়েছেন বাচিকশিল্পী হিসেবে।

১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’দিয়ে হয়েছিল শুরুটা। এরপর সত্যজিৎ রায়ের ২৭টি ছবির ১৪ টিতেই প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সৌমিত্র।

সৌমিত্রের চেহারায় সত্যজিৎ এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে সৌমিত্রকে তিনি বলেছিলেন, ‘তরুণ বয়সের রবীন্দ্রনাথ’।

সত্যজিতের ছবিতে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে সৌমিত্র অভিনয়ের ভিত তৈরি করছিলেন নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ির কাছে।

সৌমিত্রের অভিনয়ের আরেকটা দিক না বললেই নয়। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নিয়ে যদি চলচ্চিত্র হয় তবে রবীন্দ্রনাথের সংলাপ বলার মতো অভিনেতা বাংলাতে একমাত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কারণ বাংলা ভাষার উপর উনারই সেই দখলটা আছে।

উত্তমকুমারের প্রসঙ্গ টেনে ঋতুপর্ণ ঘোষ বলেছেন, উত্তমকুমার অনেক বড় অভিনেতা কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সংলাপ বলার উপযুক্ত ছিলেন কিনা আমি জানি না।

শেষ বয়সে এসে শেষ অভিনয় করেছেন নিজের বায়োপিক ‘অভিযান’-এ। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই বায়োপিকের শুটিং শেষ করেছেন, কিন্তু দেখতে পারলেন না ছবিটি।

এই ছবিতে সৌমিত্রের দীর্ঘ অভিনয় জীবন, প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার সখ্যতা এবং অতি অবশ্যই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সম্পর্কের কথা আছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় সৌমিত্রকে নিয়ে স্মৃতিরোমন্থন করেছেন সত্যজিৎ রায়ের ছেলে এবং বিখ্যাত পরিচালক সন্দীপ রায়।

সৌমিত্রের সঙ্গে তার শেষ দেখার স্মৃতিটা ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। তিনি লিখেছেন, ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োয় পৌঁছে দেখি উনি সকাল থেকে শ্যুট করছেন। ওই বয়সে সকাল ১১টা থেকে কথা বলে চলেছেন। মুখে মাস্ক নেই! চমকে উঠেছিলাম।

মাস্ক নেই কেন সৌমিত্রকাকু?

সৌমিত্রের উত্তর ছিল,‘আমার ৮৫ বছর হয়ে গেল! আমার আর মাস্ক পরে কী হবে, নতুন করে কী আর সচেতন হব… ধুর!’

 

পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য: চিফ রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার

[email protected]

 

আরও পড়ুন:

তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অতি উচ্চ মানের: গৌতম ঘোষ

বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই নক্ষত্রপতনে: অপর্ণা সেন

তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক: ববিতা

ফেলুদা কিংবা অপু, দেবদাস হয়েই বেঁচে থাকবেন সৌমিত্র

আলোকিত শিল্পী সৌমিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago