কোভিড ভ্যাকসিন প্রযুক্তি সফল হলে অন্য রোগ প্রতিরোধেও কাজে আসবে

রয়টার্স ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল হলে সেই প্রযুক্তি অন্যান্য রোগ মোকাবিলাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভ্যাকসিন তৈরির প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে শরীরকে এক ধরনের ভাইরাস ধ্বংসী কারখানায় রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে যা সম্ভাব্য অন্য মহামারি এমনকি ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও সফল্য  নিয়ে আসতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের ধারনা যে সঠিক তার প্রমাণ হলো, মডার্নার পাশপাশি শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে থাকা ফাইজার ও বায়োএনটেকের সম্ভাব্য মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক এসিড (এমআরএনএ) ভাকসিনের প্রাথমিক সাফল্য।

পরীক্ষায় দুটি ভ্যাকসিনেরই কার্যকারিতার হার ৯০ শতাংশের বেশি ছিল, যা প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেছে।

এমআরএনএ প্রযুক্তির আবিস্কার হয়েছে প্রায় ৬০ বছর আগে। যদিও এতদিনে ভ্যাকসিন তৈরির কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়নি।

প্রচলিত ভ্যাকসিন পদ্ধতিতে মৃত অথবা দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তোলা হয়। এধরনের ভ্যাকসিন তৈরিতে বছর দশেক সময় লাগে। মহামারি ফ্লুয়ের একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে আট বছর সময় লেগেছিল। অন্যদিকে হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন তৈরিতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৮ বছর।

এদিকে, মডার্না করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় জিন সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে। যা গড়ে ৬৩ দিনের মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের উপযোগী হয়ে ওঠে। বয়োএনটেক ও ফাইজারও করোনা ভ্যাকসিন তৈরির জন্য একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এগুলো মোটামুটি একবছরের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে।

অন্যান্য সংস্থাগুলোও একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যেমন- জার্মানির কিওরভ্যাকেরও একটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন আছে। তবে এখনও শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে না পৌঁছানোয় এটি ২০২১ সালের জুলাইয়ের দিকে অনুমোদন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক জেরেমি ফারার জানান, ভ্যাকসিন তৈরিত ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির পরিবর্তন হলে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক সাফল্য আনবে।

তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে আমরা যখন ২০২০ সালের কাজগুলো দেখবো তখন হয়তো এটাই বলবো যে, এ বছর বিজ্ঞান সত্যিই অনেক এগিয়ে গিয়েছে।'

১৯৬১ সালে আবিষ্কার হওয়া এমআরএনএ শরীরের ডিএনএ থেকে কোষগুলোতে বার্তা বহন করে। এটি কোষগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা করে, যা মানবদেশে নানা কাজে সমন্বয় এবং রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।

হাঙ্গেরিয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী, বায়োএনটেকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাটালিন কারিকো জানান, কেবল কোভিড-১৯ নয়, ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও এটি অবদান রাখতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি সফল হলে পরবর্তী অ্যান্টি ভাইরাল পণ্য, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের ভ্যাকসিন তৈরির যাত্রা আরও সহজ হতে পারে।’

মডার্না ও বায়োএনটেক পরীক্ষামূলক ক্যান্সারের ওষুধ তৈরিতেও এনআরএনএ’র প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। বায়োএনটেক সুইস ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট রোশের সঙ্গে একটি অ্যান্টি মেলোনোমা এনআরএনএ পরীক্ষা করছে। এটি এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে আছে।

ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক বেশি সময় লাগে। এটা বেশ ব্যয়বহুলও। ভ্যাকসিন তৈরির ল্যাব ও সুযোগ সুবিধার জন্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দরকার হতে পারে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ভ্যাকসিন গবেষক জোল্টান কিজ জানান, প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে, ২০ মিলিয়ন ডলারের স্থাপনায় পাঁচ লিটারের একটি বায়োরিএক্টরে বছরে কয়েক ধরনের এমআরএনএ ভ্যাকসিনের প্রায় এক বিলিয়ন ডোজ তৈরি করা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English

Govt looking to defuse trade tensions with India

Bangladesh does not want any further escalation in tension with India, as the recent retaliatory moves are affecting bilateral trade and both countries’ businesses.

7h ago