‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ অভিযোগে ইউল্যাবের ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে 'মিথ্যা' তথ্য প্রচার করার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ফি এর ৫০ শতাংশ মওকুফের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে 'মিথ্যা' তথ্য প্রচার করার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ফি এর ৫০ শতাংশ মওকুফের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

এই দুই শিক্ষার্থী হলেন--মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাদাত রুহুল ও রায়হান আতিক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত রবিবার এই দুইজনকে বহিষ্কারের বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করে।

বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপরাধে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এই দুজন শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে 'মিথ্যা' তথ্য প্রচার করেছিল।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং দুজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রামচন্দ্রপুর ক্যাম্পাসে একদল শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছে।

রায়হান আতিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ সিদ্ধান্ত দুঃখজনক ও ন্যাক্কারজনক। এতে আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমার অভিভাবকেরাও এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।'

সাদাত বলেন, 'এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব।'

এই দুই শিক্ষার্থী জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৫০ শতাংশ ফি মওকুফসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বহিষ্কার করেছে। অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে--ল্যাব ফি ও লাইব্রেরি ফি বাতিল করা এবং শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট প্যাকেজ সরবরাহ।

ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক এইচ এম জহিরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই দুই শিক্ষার্থী "মিথ্যা" তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ মওকুফের দাবি সম্পর্কে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৪২০০ জন। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরই কোনও না কোনও শিক্ষা বৃত্তির মাধ্যমে ১০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ফি মওকুফ হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা কোনও ধরনের ল্যাব ফি বা লাইব্রেরি ফি নেই না। আর, ডিজিটাল ডিভাইস একটা জাতীয় সমস্যা। এটা আমি একা সমাধান করতে পারবো না।'

বহিষ্কারাদেশে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ জানায়, আতিক ২৩ অক্টোবর ফেসবুকে একটি মিথ্যা বিবৃতি পোস্ট করেছেন। সেখানে বলা হয়, ইউল্যাব বেশ কিছু সংখ্যক কর্মচারী ছাঁটাই করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ বেতন দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া, আতিক ২৮ অক্টোবর ইউল্যাবিয়ান নিউজে (ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের ফেসবুক নিউজ পোর্টাল) একটি ভিডিওতে মিথ্যা বিবৃতি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ইউল্যাব ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সরকারের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছে। কিন্তু, তা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে যাচ্ছে না।'

এ প্রসঙ্গে আতিক জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে ধানমণ্ডি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মী ছাঁটাই করে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর, পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন এখন মাত্র একজন। এ ছাড়া, কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট দেয়নি এবং যারা ফোন বিল পেয়ে থাকেন, তাদেরও সেই সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক জহিরুল জানান, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের পুরো বেতন দেওয়া হচ্ছে।

'আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লিনারদের আউটসোর্স করি। আর, নিরাপত্তা কর্মী আগের মতোই আছে,' যোগ করেন তিনি।

ইউল্যাব কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত ২৭ অক্টোবর সাদাত একটি 'মিথ্যা' ও 'ভিত্তিহীন' সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ল্যাব ফি, লাইব্রেরি ফিসহ অন্যান্য ফি নেওয়ার কথা বলা হয়।

সাদাত বলেন, গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রাক-নিবন্ধন ফি এর ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ছাড় দেয়। কিন্তু, শরৎকালীন সেমিস্টারে তা বাতিল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক জহিরুল জানান, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে কেবল যাদের প্রয়োজন, তাদেরকেই এই ছাড় দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, '২০ শতাংশ মওকুফের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর ৪০০০ টাকার বেশি ফি মওকুফ হওয়ার সুযোগ ছিল না। নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা বা তারও বেশি ছাড় পাওয়ার সুযোগ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago