পানির হাহাকার, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে বিকাল নাগাদ
সিলেটের আখালিয়ার কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মেরামত কাজ বিকাল নাগাদ শেষ হবে বলে ধারণা করছেন প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, দুটি ট্রান্সফর্মার ও একটি কন্ট্রোল বোর্ড পুনঃস্থাপনের কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
আজ বুধবার দুপুরে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসনুন আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের একটি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়ে গেছে। ধারণা করছি সেটা বিকালের মধ্যে রিপ্লেস করা যাবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থায় পল্লীবিদ্যুতের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। পিডিবির একটি ট্রান্সফর্মার ও একটি কন্ট্রোল বোর্ড এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের একটি ট্রান্সফর্মার রিপ্লেসের কাজ শেষ হলে সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আমাদের প্রায় চার শ কর্মী কাজ করছেন। আশা করছি বিকালের মধ্যে মেরামত কাজ শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটি সাপ্লাই ফিডে আগুন লেগে যায়। সেখান থেকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দুটি ট্রান্সফার্মারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মোট তিনটির মধ্যে একটি কন্ট্রোল বোর্ড আগুনে পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের দুটি আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। আগামীকাল তিন কর্মদিবস শেষ হবে।’
প্রায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। ভেঙে পড়েছে চিকিৎসাসহ জরুরি সেবা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা জেনারেটর ব্যাকআপ নিয়ে চলছি।’
বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিক সমিটির সভাপতি ডা. নাসিম হোসেন বলেন, ‘বড় হাসপাতালগুলোতে তেমন সমস্যা না হলেও ছোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কোনো সেবা দিতে পারছে না। পুরো সিস্টেম কলাপস করেছে। বড় হাসপাতালগুলোতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে জেনারেটর বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সেই সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকছে।’
সিলেটের বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, কালীবাড়ী, হাওলদারপাড়া, শিবগঞ্জ, রায়নগর, কুমারপাড়া, ঝরনারপাড়, শেখঘাট, চালিবন্দর, কামালগড়, ছড়ারপাড়, লামাবাজারসহ ২৭টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের পানির খোঁজে বের হতে দেখা গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে গৃহস্থালি কাজ।
নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোনে চার্জ নাই। কতক্ষণে পরিস্থিতি স্বভাবিক হবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। মোবাইল ফোন চার্জ করাতে অনেকে হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ভিড় জমাচ্ছেন। তারা ব্যক্তিগত জেনারেটর ব্যবহার করে ৫০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল চার্জ করে দিচ্ছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা জাহেদা আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজের খাবার নষ্ট হতে শুরু করেছে।’
সিলেটের শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা রাজীব রাসেল বলেন, ‘খাবার পানি কিনে খাচ্ছি, কিন্তু সব এলাকা তো পুকুর নেই। গৃহস্থালি কাজ, গোসল এসব বন্ধ হয়ে গেছে।’
দেব কল্যাণ ধর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেকে ব্যক্তিগতভাবে মোটর দিয়ে পানি তুলে দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানির জন্য ঘুরছেন।’
নয়াসড়ক এলাকার বাসিন্দা তানবীর রুহেল বলেন, ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক এলাকায় নেটওয়ার্ক না থাকায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কাল রাত থেকে মোমবাতি সংকট দেখা দিয়েছে। ভ্যানে করে দ্বিগুন তিন গুন বেশি দামে পানি বিক্রি করছে। যেসব এলাকায় পুকুর বা দিঘি আছে সেখানার মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে আছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, গতকাল শহরে মাইকিং করা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। গতকাল অগ্নিকাণ্ডের আগে প্রায় এক কোটি লিটার পানি সরবরাহ করেছি আমরা। নগরীর মোট চাহিদা ৮ কোটি লিটারের মধ্যে চার থেকে পাঁচ কোটি লিটার পানি সিটি করপোরেশন সরবরাহ করতে পারে। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে সিলেটের আখালিয়ার কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে সিলেট জেলা ও সুনামগঞ্জের কিছু অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎহীন সিলেট, জনজীবন বিপর্যস্ত
সিলেটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আগুন নিয়ন্ত্রণে, বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি এখনও
Comments