শিক্ষার আলোবঞ্চিত বেদে শিশু

শিউলী, মিষ্টি, আদিবা- সবারই বয়স ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে। একসঙ্গে খেলছে নিজের মতো করে। তিন দিন আগে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বিন্নাগাড়ি এলাকায় একটু উঁচু ও খোলা স্থানে ২০টি বেদে পরিবার তাদের অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছে। এরা সেই বেদে পরিবারেরই শিশু।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বিন্নাগাড়ি এলাকায় অস্থায়ী আবাসের সামনে খেলছে বেদে পরিবারের তিন শিশু। ছবি: এস দিলীপ রায়

শিউলী, মিষ্টি, আদিবা- সবারই বয়স ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে। একসঙ্গে খেলছে নিজের মতো করে। তিন দিন আগে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বিন্নাগাড়ি এলাকায় একটু উঁচু ও খোলা স্থানে ২০টি বেদে পরিবার তাদের অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছে। এরা সেই বেদে পরিবারেরই শিশু।  

এখনো অক্ষর জ্ঞানের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় হয়নি। পরিবারের বড় সদস্যদেরও একই অবস্থা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা মিশে যায় তাদের পারিবারিক পেশায়। আয় করতে হয় গ্রাম ঘুরে ঘুরে। অল্প বয়সেই হয়ে যায় বিয়ে।

জানতে চাই, পড়তে ইচ্ছে করে না?

উত্তর দেয় শিউলী, ‘ইচ্ছে তো করেই। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাবা-মা তো স্কুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ করে দেয় না।’

শিউলীর মা জরিনা বেগম (২৬) বলেন, ‘আমার বাবা-মাও আমাকে পড়ালেখা শেখায়নি। বেদেদের কাজ শিখিয়েছে। এখন এই করেই রোজগার করে খাই।’

কথা হয় মিষ্টির বাবা নুর হোসেন (৩৫) এর সঙ্গে। বলেন, ‘আমাদের বাড়ি নেই, ঘর নেই। থাকার জায়গা নেই। কীভাবে সন্তানদের পড়ালেখা শেখাই?

বেদে কম্যুনিটির এই ডেরার সর্দার আজিজুল ইসলাম (৬২) জানান, এই ডেরায় ২০টি পরিবারে লোকসংখ্যা রয়েছে ৮৫ জন। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৪৫। সন্তানদের ডেরার মধ্যে রেখে বাবা-মা দুজনই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান উপার্জনের জন্য।

‘আমরা অস্থায়ী বসবাস করি। এক স্থানে সর্বোচ্চ একমাস পর্যন্ত থাকি। আমরা নিজেরাও শিক্ষিত হতে পারিনি, আমাদের সন্তানদেরও শিক্ষিত করার সুযোগও পাচ্ছি না,’ বলেন তিনি।

ঢাকার সাভার এলাকায় বেদে কম্যুনিটির লোকজন স্থায়ী ঠিকানায় বসবাস করেন। সেখান থেকে তারা দলবদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।

বেদে সর্দার আজিজুল ইসলাম জানান, সরকারের কোন বিভাগই তাদের খোঁজ নেন না। তাদের জন্য মেলে না সরকারের কোন সহায়তা।

‘আমাদের মধ্যে কুসংস্কার আছে আর আমরা কুসংস্কার নিয়েই বেঁচে আছি। সরকার উদ্যোগ নিলে হয়তো আমাদের শিশুরা অক্ষর জ্ঞানে আলোকিত হওয়ার সুযোগ পেত,’ বলেন তিনি।

লালমনিরহাট প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী দ্য ডেইলী স্টারকে বলেন, বেদে কম্যুনিটির লোকজনকে সচেতন করাটা কষ্টের। এই কম্যুনিটির লোকজন স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করেন না, তাই তাদের সন্তানরাও যাযাবর হয়ে যায়। এ কারণে এই কম্যুনিটির সব শিশুই অক্ষর জ্ঞানহীন থেকে যাচ্ছে।

‘বেদে কম্যুনিটির লোকজন সচেতন হলে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের শিশুদের অক্ষর জ্ঞানে আলোকিত করা সম্ভব,’ বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Saber Hossain Chowdhury arrested

The Detective Branch of police today arrested Saber Hossain Chowdhury, former environment forest and climate change minister and Dhaka-9 lawmaker, at the capital’s Gulshan

2h ago