‘সাঁঝের মায়া’র কবি সুফিয়া কামাল স্মরণ

পাঠক-নন্দিত কবি সুফিয়া কামাল এদেশের যে কোনো সংকটকালে, যে কোনো আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিল তার অবস্থান। সংগঠক হিসেবেও তার ছিল অনেক সুনাম। এই অঞ্চলে নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত তিনি।
Sufia Kamal
কবি সুফিয়া কামাল। সংগৃহীত

পাঠক-নন্দিত কবি সুফিয়া কামাল এদেশের যে কোনো সংকটকালে, যে কোনো আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিল তার অবস্থান। সংগঠক হিসেবেও তার ছিল অনেক সুনাম। এই অঞ্চলে নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত তিনি।

সবকিছু ছাড়িয়ে তিনি একজন কবি, বিপুল পাঠকের ভালোবাসা কুড়ানো এক কবি তিনি।

আজ তার প্রয়ান দিবস।

তার লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল সেই সময়ের আলোচিত পত্রিকা সওগাত এ। ‘বাসন্তী’ নামের কবিতাটি তাকে এনে দিয়েছিল ভীষণ আত্মবিশ্বাস। তারপর কবিতার প্রেমে পড়ে যান তিনি।

জীবদ্দশায় কবি হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন অনেক সাফল্য।

কবি সুফিয়া কামালের প্রথম প্রকাশিত কবিতার বইয়ের নাম ‘সাঁঝের মায়া’। জাতীয় কাজী নজরুল ইসলাম এই বইটির জন্য আলোচনা  লিখেছিলেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন সুফিয়া কামালের কবিতার অনুরাগী।

জীবদ্দশায় তিনি ‘জননী সাহসিকা’ আখ্যা পেয়েছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল প্রাতঃস্মরণীয়। কার্ফু উপেক্ষা করে তিনি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। ভাষা অন্দোলনেও তিনি অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে।

দেশভাগের আগে বেশ কয়েকদিন সে সময়ের আলোচিত পত্রিকা বেগম-র সম্পাদক ছিলেন। তার প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর কিছুদিন কলকাতা কপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছিলেন তিনি।

১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচি-কাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন এই কবি। তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৬১ সালে। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ গঠন করেন। কর্মময় ছিল তার জীবন।

মূলত কলকাতা ও ঢাকা-কেন্দ্রিক ছিল কবি সুফিয়া কামালের জীবন। কলকাতায় থাকার সময় প্রখ্যাত কবি ও লেখকদের সাক্ষাত পেয়েছিলেন তিনি। বেগম রোকেয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সুযোগ ঘটেছিল। তবে, দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন পরিবার নিয়ে।

শত কাজের মধ্যেও কবিতা ছিল তার সবকিছু। কবিতা ছিল তার ঠিকানা। কবিতা ছিল তার ভালোবাসা। কবিতা থেকে কখনো নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি।

তার প্রথম কবিতার বই ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে। তার দ্বিতীয় কবিতার বইয়ের ‘মায়ার কাজল’, তারপর প্রকাশিত হয় ‘মন ও জীবন’ কবিতার বইটি।

কবির অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে: ‘প্রশস্তি ও প্রার্থনা’, ‘উদাত্ত পৃথিবী’, ‘দিওয়ান’, ‘অভিযাত্রিক’, ‘মৃত্তিকার ঘ্রাণ’ ও ‘মোর জাদুদের সমাধির পরে’।

কবি হিসেবে দেশজুড়ে ও বাংলা ভাষার মানুষদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলেও তিনি নানা ধরনের লেখা লিখতেন। তার লেখা প্রথম গল্পের বইয়ের নাম ‘কেয়ার কাঁটা’। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৭ সালে।

তিনি লিখেছেন ভ্রমণ কাহিনী ‘সোভিয়েতের দিনগুলিৎ। আবার আত্মজীবনীমূলক বইও লিখেছেন ‘একালে আমাদের কাল’।

স্মৃতিকথা লিখেছেন ‘একাওরের ডায়েরি’। এটি তার অন্যতম সৃষ্টি, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠে এসেছে অসাধারণভাবে।

তার লেখায় বাদ পড়েনি ছোটদের কথাও। শিশুদের জন্যও তিনি লিখেছেন ‘ইতল বিতল’ ও ‘নওল কিশোরের দরবারে’।

কবি সুফিয়া কামাল পাঠকের ভালোবাসা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় ও নানা সংগঠন থেকে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার তার ঘরে উঠেছে ষাটের দশকে (১৯৬২ সালে)। এছাড়াও একুশে পদক, নাসিরউাদ্দন স্বর্ণ পদক, বেগম রোকেয়া পদক, স্বাধীন দিবস পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারসহ অসংথ্য পুরস্কার তার ঘরকে করেছে আলোকিত।

কবি সুফিয়া কামাল নিজে আলোকিত করেছেন পুরো দেশকে, দেশের মানুষকে, পাঠককে। তার লেখা কবিতা আজও পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যায়। আজও নতুন প্রজন্ম তার কবিতাকে সঙ্গী করে নিয়ে, তার কবিতার বই সাঁঝের মায়ার মতো কিছুটা সময় কাটিয়ে দেয়।

১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ‘জননী সাহসিকা’-খ্যাত সাঁঝের মায়ার কবি সুফিয়া কামাল।

Comments

The Daily Star  | English

BNP places several demands to Yunus, including removal of 'one or two' members of interim govt

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir led the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

4h ago