ট্রাম্পের আইনজীবীদের ‘মিথ্যা দাবি’ ও ‘ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির নেতৃত্বে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের আইনি দল এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপির’ অভিযোগ করেছে।
Donald Trump-22.jpg
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির নেতৃত্বে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের আইনি দল এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপির’ অভিযোগ করেছে।

গতকালসিএনএন জানিয়েছে, প্রায় ৯০ মিনিটের ওই ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরা হয়। তবে তারা ব্যাপক জালিয়াতির কোনো প্রমাণই এখনও পর্যন্ত তুলে ধরতে পারেননি।

প্রচারণা শিবিরের আইনি উপদেষ্টা জেনা এলিস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখন কেবল “প্রাথমিক বক্তব্য’ দেওয়া হয়েছে, সামনে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।’

মার্কিন নির্বাচনে ভেনেজুয়েলা ও বিনিয়োগকারী জর্জ সোরোসের হস্তক্ষেপ আছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্পের আইনজীবী সিডনি পাওয়েল।

সংবাদ সম্মেলনে জুলিয়ানি এমন কয়েকজনকে উদ্ধৃত করে অভিযোগ করেছেন যাদের নাম-পরিচয় জানানো হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘নিজস্ব নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

তাদের নির্দিষ্ট দাবির অনেকগুলো ইতোমধ্যেই ফেডারাল নির্বাচন সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও দেশটির নির্বাচন প্রশাসকরা খারিজ করে দিয়েছেন বলে সিএনএন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা যেসব জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন সেগুলো হলো:

ওয়েইন কাউন্টির সার্টিফিকেশন

গতকাল ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির মিশিগানে একটি মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ওয়েইন কাউন্টি বোর্ডকে নির্বাচনী সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য ওই মামলা করা হয়েছিল। জুলিয়ানি জানিয়েছেন, নির্বাচনী সার্টিফিকেট বাতিল হওয়াতে মামলাটি তুলে নেওয়া হয়েছে।

এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে সিএনএন

সিএনএন জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে ওই কাউন্টির নির্বাচনী সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। বোর্ডের দুই রিপাবলিকান সদস্য প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে তারা সিদ্ধান্ত পাল্টে সার্টিফিকেশনের পক্ষে ভোট দেন।

তবে, এর পরদিনই তারা একটি এফিডেভিট জমা দিয়ে জানিয়েছেন, তাদেরকে চাপ দিয়ে সম্মতি আদায় করা হয়েছে।

ওয়েইন কাউন্টির নির্বাচন বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেট জনাথন কিনোলচ বলেছেন, ‘রিপাবলিকান সদস্যদের এমন অবস্থান নেওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে। তাদের সম্মতির পরই কাউন্টি থেকে সার্টিফাই করে ভোটের ফল অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এখন তা আবার ফিরিয়ে আনার কোনো নিয়ম নেই।’

মিশিগানে প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় বেশি ভোট

জুলিয়ানি বলেছেন, ‘মিশিগানের ওয়েইন কাউন্টিতে রিপাবলিকানরা সার্টিফিকেশনের পক্ষে না থাকার একটি কারণ হলো প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় বেশি ভোট।’ এটিকে একটি জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিএনএন’র মতে, জুলিয়ানি যেটাকে বেশি ভোট বলছেন, সেটি মূলত টেবুলেটেড ব্যালটের সংখ্যা ও সাইন ইন করা ভোটার সংখ্যার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা। কখনো কখনো নির্দিষ্ট এলাকায় টেবুলেটেড ব্যালট সংখ্যা ও ভোট দেওয়ার জন্য সাইন ইন করা লোকের সংখ্যার সমান হয় না।

মিশিগানের সেক্রেটারি অব স্টেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মিশিগানে যখন ট্রাম্প জিতেছিলেন তখনও একইরকম অসামঞ্জস্যতা ছিল। সেটি শুধরে নিয়েই নির্বাচনী সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।

ডেট্রয়েট সিটি ক্লার্কের সিনিয়র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ক্রিস টমাস জানিয়েছেন, অনেক কারণে ব্যালট সংখ্যা ও পোল বইতে নিবন্ধিত লোকের সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। ‘বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সাধারণত এ ধরনের পার্থক্যকে জালিয়াতি নয় বরং পোল এজেন্টদের ভুল হিসেবে দেখা হয়,’ যোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে, জুলিয়ানি দাবি করেছেন যে পেনসিলভেনিয়ায় ছয় লাখেরও বেশি ব্যালট বাতিল হবে। সিএনএন’র ভাষ্য মতে, এই তথ্যটিও মিথ্যা।

পেনসিলভেনিয়া সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ব্যালটগুলো অবৈধ প্রমাণিত হয়নি।

মেইল-ইন ব্যালট

ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে আবারও মেইল-ইন ব্যালটে প্রতারণা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, মেইল-ইন ব্যালটে নিরাপদে ভোট দেওয়া যায়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক জালিয়াতির সম্ভাবনা নেই।

পেনসিলভেনিয়া নিয়ে মিথ্যা দাবি

জুলিয়ানি আরও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যামুয়েল আলিতো পেনসিলভেনিয়ার নির্বাচনের জালিয়াতির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি গত ৩ নভেম্বর রাত ৮ টার পর যেসব ব্যালট আসবে সেটিকে আলাদা করে রেখে দেওয়ার ও না খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সিএনএন জানিয়েছে, জুলিয়ানির এই দাবিটিও মিথ্যা। আলিতো এমন কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি নির্বাচনের কাউন্টি বোর্ডগুলোকে পেনসিলভেনিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছিলেন। সেক্রেটারি অব স্টেটের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৪ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত আসা ব্যালটগুলো গণনার আগে ও পরে আলাদা করে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ডোমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেম ভেনেজুয়েলা

সিডনি পাওয়েল জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রযুক্তি সংস্থা ডোমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমের ভোটিং মেশিনগুলো কারচুপির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার নেতা হুগো চাভেজের নির্দেশনায় এ ইলেকট্রনিক মেশিনের সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে বলেও জানান তিনি। তার দাবি, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও সোরোসের সঙ্গে ওই কোম্পানির সম্পর্ক আছে।

সিএনএন জানিয়েছে, ভেনিজুয়েলা, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন কিংবা সোরোসের সঙ্গে ডোমিনিয়নের কোনো কর্পোরেট সম্পর্ক নেই।

ভেনেজুয়েলার সাবেক সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ মারা গেছেন ২০১৩ সালে।

তবুও, জুলিয়ানি ও অন্যান্য আইনজীবীরা কোনো প্রমাণ ছাড়াই ‘গভীর চক্রান্তের’ মাধ্যমে ভোট চুরি করা হয়েছে বলে দাবি করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

6m ago