বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা ও ভাঙনকবলিত ১১ হাজার পরিবার বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের বাগান থেকে পুষ্টি সহায়তা পেয়ে বেশ খুশি।
বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করছেন ব্রহ্মপুত্রপাড়ের মানুষ। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা ও ভাঙনকবলিত ১১ হাজার পরিবার বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের বাগান থেকে পুষ্টি সহায়তা পেয়ে বেশ খুশি।

তারা বসতবাড়ির সামান্য জায়গাতেই বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল চাষ করছেন। এ অঞ্চলে সর্বাধিক চার থেকে ছয় শতাংশ জমির বসতভিটা থাকলেও এই বসতভিটার ওপরেই বাড়ি-ঘরের চারপাশে সবুজে ভরে গেছে।

চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ে মন্ডলপাড়া গ্রামের বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের গৃহবধূ রেশমা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তাদের বসতভিটাটি মাত্র চার শতাংশ জমির উপর। তারা বসতভিটাটিকে একটি শাক-সবজি ও ফলের বাগান হিসেবে তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ির আশেপাশে লাউ, পেঁপে, মরিচ ও আদা চাষ করেছি। আমাদের বসতভিটার বাগান থেকে শাক-সবজি থেকে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারছি। এমনকি অতিরিক্ত কিছু বিক্রি করে আয়ও করছি।’

একই গ্রামের মালেকা বেওয়া জানিয়েছেন, এখন তারা বসতবাড়ির একটু জায়গাও অলসভাবে ফেলে রাখেন না। বসতভিটাটি তারা বাগানের জন্য ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আবাদযোগ্য জমি বা বসতভিটায় বিশাল জায়গা নেই। তাই আমাদের বাড়ির ছোট্ট জায়গাটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছি। শাকসবজি ও নানা রকম ফল ফলাচ্ছি যা আমাদের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে।’

‘শাকসবজি, ফলমূল বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয় বলে আমরা সাধারণত সেগুলো কিনে খেতে পারি না। আমরা যদি বসতভিটাকে বাগান হিসাবে তৈরি না করতাম তাহলে এসব খাওয়া আমাদের সম্ভব হতো না’, জানালেন চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রপাড়ের জোরগাছ গ্রামের বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের গৃহিনী হ্যাপি বেগম।

একই গ্রামের ফাতেমা বেওয়া বললেন, ‘সারা বছর বসতভিটায় কিভাবে শাকসবজি, ফলমূল চাষ করতে হয় তা আমরা জানতাম না। সে কারণে ফাঁকা জায়গাগুলো অলস হয়ে পড়ে থাকতো। একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমরা বসতভিটাকে বাগান হিসেবে ব্যবহার করে আসছি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ ও আইসিসিও যৌথভাবে সাসটেইন্ড অপরচিউনিটি ফর নিউট্রিশন গভার্নেন্স (এসওএনজিও) একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ব্রহ্মপুত্রপাড়ে।

সেই প্রকল্প দরিদ্র পরিবারের প্রসূতি মা ও শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পুরণে কাজ করছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিনামুল্যে বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমুলের বীজ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদেরকে হাতে-কলমে সবজি চাষ ও পরিচর্যার ব্যাপারে সহায়তা করা হচ্ছে।

এসওএনজিও প্রকল্পের চিলমারী উপজেলা সমন্বয়কারী আহসানুল কবির বুলু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নারীরা বসতভিটায় কিভাবে শাকসবজি ও ফলের বাগান তৈরি করে পরিচর্যা করবেন সে সম্পর্কে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা বিনামূল্যে বীজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিই। আমরা বাগান পর্যবেক্ষণও করি।’

‘বসতভিটার বাগান থেকে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছেন,’ এমনটি জানিয়ে তিনি আরও বলেন ব্রগ্মপুত্রপাড়ে এখন প্রায় প্রত্যেকটি বসতভিটা এক একটি সবজি বাগানে পরিণত হয়েছে।

চিলমারীতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিজন দাস ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘কিভাবে বসতভিটার খালি জায়গায় শাকসবজির বাগান তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে এনজিওর পাশাপাশি আমরাও ধারণা দিয়ে থাকি।’

‘অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে পুষ্টি সহায়তা করার ক্ষেত্রে বসতভিটায় বাগান ভুমিকা রাখছে,’ যোগ করেন তিনি।

Comments