অটোরিকশার ব্যাটারি ছিনতাই চক্রের প্রধান গ্রেপ্তার
তারা পেশাদার ‘ছিনতাইকারী’। তবে তারা মূলত অটোরিকশা টার্গেট করে ব্যাটারি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য।
এ কাজের জন্য সন্ধ্যায় যাত্রীবেশে তারা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে। নির্জন স্থানে পৌঁছলে তাদের সহযোগীরা রিকশাটি ঘিরে ধরে চালককে ছুরির মুখে রেখে এর ব্যাটারি ছিনিয়ে নেয়।
চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে চিৎকার করে স্থানীয়দের সাহায্য চাইলে তারা পালিয়ে যায়।
একটি রিকশায় চারটি করে ব্যাটারি থাকে। প্রতিটির প্রকৃত দাম ৪০ হাজার টাকা করে হলেও ছিনতাইকারীরা সেগুলো দোকানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
গতকাল সাভার থেকে একটি ছিনতাই চক্রের প্রধানকে গ্রেপ্তারের পর এমন অভিনব ছিনতাই চক্রের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম আলী হায়দার ওরফে নাহিদ হাসান ওরফে নাহিদ (২৭)।
অটোরিকশাচালক শেখ মিন্টু (৩৫) হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআইয়ের একটি দল নাহিদকে গ্রেপ্তার করে বলে জানান পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ১৩ জুলাই ব্যাটারি ছিনতাইকারীরা মিন্টুকে হত্যা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।’
তদন্তকারীরা জানান, ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নাহিদ ও ব্যাটারি ছিনতাই চক্রের আরেক সদস্য মিন্টুকে আশুলিয়ার থানার খোরশেদ কমিশনারের বাড়ির কাছ থেকে গেরুয়া এলাকায় যাওয়ার জন্য ভাড়া করেন।
মিন্টু ২০০ টাকা ভাড়া চাইলে তারা ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে রওনা দেন।
রিকশাটি মোকামটেক এলাকায় পৌঁছালে রাস্তা অন্ধকার ও নির্জন থাকায় মিন্টু আর না যাওয়ার কথা বলে তাদের কাছে ভাড়া চান।
নাহিদের বরাত দিয়ে তদন্তকারীরা জানান, যেহেতু তারা কেবল ব্যাটারি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে অটোরিকশাটিকে ভাড়া করেছিল, সেহেতু তাদের কাছে ভাড়া মেটানোর মতো টাকা ছিল না।
এসপি খোরশেদ জানান, ভাড়া না পেয়ে চালক মিন্টু চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান নাহিদ চাকু দিয়ে মিন্টুর পেট ও গলায় আঘাত করেন।
মিন্টুর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়ায় ছনতাইকারীরা ব্যাটারি না নিয়েই পালিয়ে যায়।
হত্যা মামলার তদন্তে থাকা এই কর্মকর্তা জানান, নাহিদ ঘটনাস্থলে তার জুতা ফেলে যান এবং চাকুটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেন।
পিবিআই এই হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর অবশেষে বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিটের একটি দল এই ছিনতাই চক্রের দলনেতা ও হত্যা মামলার মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানান তিনি।
মিন্টু হত্যা মামলার আরেক তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ স্বীকার করেছেন যে, তিনি ব্যাটারি ছিনতাই চক্রের দলনেতা হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা প্রায়ই অটোরিকশার ব্যাটারি ছিনতাই করে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। তাদের দলে আরও ১০ থেকে ১১ জন সদস্য রয়েছে, যাদের ধরার জন্য আমাদের অভিযান চলছে।’
তারা আগে ছোটখাটো অপরাধ করে আসলেও গত দুই বছর ধরে অটোরিকশার ব্যাটারি ছিনতাই করছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি এরা রিকশাচালকদের কাছ থেকেও টাকাও ছিনতাই করতো।’
Comments