গাউছিয়ার দোকানকর্মী থেকে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠার গল্প

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় স্বর্ণব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বাসায় গতকাল মধ্যরাত থেকে অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় সেখান থেকে অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়।
Golden Monir.jpg
মাদক ও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় স্বর্ণব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বাসায় গতকাল মধ্যরাত থেকে অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় সেখান থেকে অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়।

আজ শনিবার মাদক ও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে মনিরকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় র‌্যাব। পরে এক বিফ্রিংয়ে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের কাপড়ের দোকানের সাধারণ বিক্রয়কর্মী মনিরের ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠার গল্প জানান র‍্যাবের পরিচালক (আইন ও মিডিয়া) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘অভিযানকালে মনিরের বাসা থেকে ১০টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা (বাংলাদেশি নয় লাখ টাকা), ৬০০ ভরি সোনা (প্রায় আট কেজি) ও এক কোটি নয় লাখ টাকা নগদ জব্দ করেছি।’

‘অভিযুক্ত মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির মূলত একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরাকারবারি এবং ভূমির দালাল। তিনি একটি গাড়ির শোরুমের সত্ত্বাধিকারী। পাশাপাশি গাউছিয়াতে একটি স্বর্ণের দোকানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে’, বলেন তিনি।

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তার বাসা থেকে দুটি বিলাসবহুল অনুমোদনহীন বিদেশি গাড়ি জব্দ করেছি। যার একেকটির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। পাশাপাশি তার কার সিলেকশন থেকেও তিনটি বিলাসবহুল অনুমোদহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।’

‘গ্রেপ্তারকৃত মনির ৯০ দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে ক্রোকারিজ, লাগেজ ব্যবসা (ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য দেশে আনা) এবং এক পর্যায়ে স্বর্ণ চোরাকারবারের সঙ্গে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। তিনি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ অবৈধ পথে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন’, যোগ করেন তিনি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মনিরের স্বর্ণ চোরাচালানের রুট ছিল ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ভারত। এই সব দেশ থেকে তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বাংলাদেশে আমদানি করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে তার নাম হয়ে যায় গোল্ডেন মনির।’

স্বর্ণ চোরাকারবারের জন্য মনিরের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয় বলেও জানান তিনি।

Golden Monir-2.jpg
মনিরের বাসা থেকে অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের আরেকটি পরিচয় আছে- ভূমিদস্যু। রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকা শহরের ডিআইটি প্রজেক্ট, পাশাপাশি বাড্ডা, নিকুঞ্জ, উত্তরা এবং কেরানীগঞ্জে তার দুই শতাধিকের বেশি প্লট আছে বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব।’

ইতোমধ্যে মনির ৩০টি প্লটের কথা প্রাথমিকভাবে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘মনির রাজউকের কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্বর্ণ চোরাকারবারি করে তার যে সম্পদের পরিমাণ, সেটি প্রায় এক হাজার ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে।’

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য দুদক, বিআরটিএ, মানিলন্ডারিংয়ের জন্য সিআইডি এবং ট্যাক্স ফাঁকি বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে এনবিআরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে র‌্যাব।’

তিনি বলেন, ‘মনিরের যে ফৌজদারি অপরাধ, অনুমোদহীন বিদেশি মুদ্রা রাখার জন্য বাড্ডা থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করবে। এ ছাড়াও, অস্ত্র এবং মাদক রাখার জন্য অস্ত্র ও মাদক আইনেও মামলা দায়ের করবে।’

আরও পড়ুন:

মাদক ও অবৈধ অস্ত্রসহ গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার

Comments

The Daily Star  | English

A mindless act shatters a family's dreams

Family now grapples to make ends meet after death of sole earner in Gazipur train attack in December last year

2h ago