নিষিদ্ধ, তারপরও হাইওয়েতে ধীরগতির বাহন কেন?

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, হাইকোর্ট এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী ধীরগতির তিন চাকার বাহন হাইওয়েতে চলা নিষিদ্ধ। তারপরও এমন হাজার হাজার বাহন হাইওয়েতে দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষ করে জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে। এটা কি রহস্যজনক না? আসলে, ভাবতে গেলে এটাকে রহস্যজনক মনে হবে না। পেটের দায়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ বাহনগুলো চালান অপ্রশিক্ষিত চালকরা। এগুলো রাস্তায় নামানোর জন্য প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে তাদের অনানুষ্ঠানিক ছাড়পত্র নিতে হয়। এসব বাহনের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত করতে হলে যারা এই অবৈধ ব্যবসার অনুমতির ব্যবস্থা করে অর্থ আয় করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
Accident_Chapai_19Nov20.jpg
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ধানবোঝাই ভটভটি উল্টে নয় জন নিহত ও পাঁচ জন আহত হয়েছেন। ১৯ নভেম্বর ২০২০। ছবি: রবিউল হাসান

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, হাইকোর্ট এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী ধীরগতির তিন চাকার বাহন হাইওয়েতে চলা নিষিদ্ধ। তারপরও এমন হাজার হাজার বাহন হাইওয়েতে দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষ করে জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে। এটা কি রহস্যজনক না? আসলে, ভাবতে গেলে এটাকে রহস্যজনক মনে হবে না। পেটের দায়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ বাহনগুলো চালান অপ্রশিক্ষিত চালকরা। এগুলো রাস্তায় নামানোর জন্য প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে তাদের অনানুষ্ঠানিক ছাড়পত্র নিতে হয়। এসব বাহনের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত করতে হলে যারা এই অবৈধ ব্যবসার অনুমতির ব্যবস্থা করে অর্থ আয় করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এসব বাহনের অপ্রশিক্ষিত এবং লাইসেন্সবিহীন চালকরা রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তৈরি স্থানীয় সিন্ডিকেটকে ঘুষ দিয়ে এসব যানবাহন চালান।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বেশ কয়েকবার স্বীকার করেছেন যে এর পিছনে থাকা জনপ্রতিনিধিসহ রাজনীতিবিদদের বিরোধিতার কারণে সরকার এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারেনি। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এই যানবাহনগুলোর কিছু চলে মন্ত্রীর নামে, কিছু সংসদ সদস্যের নামে এবং কিছু মেয়রদের নামে। আরেক পরিবহন নেতা জানান, রাজনৈতিক নেতাদের পরিচালিত ‘পরিবহন সংস্থা’য় এই বাহনগুলোর তালিকাভুক্তির জন্য দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। সুতরাং, মনে হচ্ছে যে সম্মিলিতভাবে মন্ত্রণালয় এবং সরকারেরও সক্ষমতা নেই এই অসাধু কর্মকর্তাদের (যাদের বেতন দেওয়া হয় করদাতাদের অর্থ থেকে) আইন ভঙ্গ করা এবং অবৈধ অর্থোপার্জন বন্ধ করার। এমন পথে তাদের এই অর্থোপার্জন, যার কারণে অগণিত মানুষকে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্ব বরন করে নিতে হচ্ছে।

গত বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের রাস্তার পাশে এমনই একটি গাড়ি, স্থানীয়ভাবে যা ভটভটি নামে পরিচিত, উল্টে নয় জন নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনার আনুমানিক ১৫ শতাংশ (প্রায় পাঁচ হাজার ৫১৬টি) এই যানবাহন এবং অবৈধ ইজি বাইকের কারণে হয়েছে। ভটভটির বেশিরভাগই বিদ্যুৎ টিলার বা পানির পাম্পের মতো সিংগল-সিলিন্ডার ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে চলে। এগুলোর ব্রেক ত্রুটিযুক্ত। ট্রাক ও বাস চলাচলকারী হাইওয়েতে চলার সময় এই গাড়িগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা উপলব্ধি করতে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার হয় না।

এই সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে কোনো কমিটিরও প্রয়োজন নেই। করণীয় সম্পর্কে সম্পর্কিত প্রত্যেকেই জানেন। এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন এবং চালকদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করুন। এই কর্মকর্তারা সরকারের কাছ থেকে বেতন নিচ্ছে এবং তারা তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য। এই ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করা না হলে সিস্টেম, আইন এবং হাইকোর্টের নির্দেশ কোথাও কোনো প্রভাব ফেলবে না। আর এই ধীর গতি সম্পন্ন যানবাহনগুলো মানুষ মারার যন্ত্র হয়ে চলতে থাকবে।

আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভটভটি উল্টে নিহত ৯

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

8m ago