অনিশ্চয়তায় দেশের গাড়ির বাজার
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছে।
বর্তমান এই সংকটের মধ্যে গাড়ির জন্য ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম থাকায় এই অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারক ও ডিলারদের অ্যাসোসিয়েশন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক জানান, গত বছর প্রতি মাসে এক হাজার ৫০০ গাড়ি বিক্রি হলেও তা বর্তমানে নেমে এসেছে ৯০০ ইউনিটে।
তিনি বলেন, ‘এর অর্থ সাধারণ সময়ের তুলনায় আমাদের বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে।’
করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন এবং ব্যয়বহুল কোনো জিনিসে অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলেও যোগ করেন তিনি।
বারভিডার সাধারণ সম্পাদক এবং এইচএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে গাড়ি বিক্রি বেড়েছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনার কারণে অক্টোবর থেকে হঠাৎ করেই আবার বিক্রি কমেছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।’
বারভিডার আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩৬টি গাড়ি বিক্রি হয়। ২০১৯ সালে গড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয়েছে ৬১টি গাড়ি।
বারভিডার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে যাওয়া অটোমোবাইল আমদানিকারক এবং বিক্রেতাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বারভিডার সাবেক সভাপতি এবং নিপ্পন অটোস ট্রেডিংয়ের মালিক মান্নান চৌধুরী খসরু জানান, তিনি এই সেক্টরে দীর্ঘ চার দশক ধরে রয়েছেন। তবে, এত ক্ষতির মুখে আর কখনো পড়েননি।
২০১৯ সালে তার প্রতিষ্ঠান অন্তত ২০০ গাড়ি বিক্রি করলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ বছর বিক্রি ৫০টি গাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করছেন তিনি। এর অর্থ, তার বিক্রি কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
মান্নান চৌধুরী খসরু আরও জানান, ইতোমধ্যে ঢাকায় তার তিনটি শোরুমের দুটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
হুন্দাই মোটরস বাংলাদেশের বিক্রয় বিভাগের উপপরিচালক ফারজানা খান জানান, কোভিড-১৯’র বিস্তার রোধে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির পরে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি কিছুটা বেড়েছিল।
তবে, সার্বিকভাবে তাদের ব্যবসা প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে প্রতি মাসে প্রায় ৭০টি গাড়ি বিক্রি করলেও এ বছর তা নেমে এসেছে ৩৫ থেকে ৪০ এ।
ফারজানা খান বলেন, ‘আয় কমতে থাকায় মানুষ বড় কিছু কিনছেন না। তারা এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে খরচ করতে আগ্রহী নন।’
গাড়ির ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সতর্ক।
ফারজানা খান বলেন, ‘ব্যাংক ও এনবিএফআই বেতনভুক্ত ব্যক্তিদের ছাড়া অন্যদের গাড়ির ঋণ অনুমোদন দিতে আগ্রহী নয়।’
পূবালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন যে গাড়ির ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কিছুটা সতর্ক রয়েছে।
তবে, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের হেড অব অটো অ্যান্ড পারসোনাল লোন মো. নুরুল ইসলাম জানান, তার প্রতিষ্ঠান ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে নমনীয় অবস্থানে এসেছে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিএফআই থেকে গাড়ির ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করেছে।
গাড়ির অবস্থা এবং ব্র্যান্ডের ওপর ভিত্তি করে কিছুক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি গাড়ির দামের ১০০ ভাগ পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। তবে, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ঋণ আবেদনের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে বলে জানান নুরুল ইসলাম। আইপিডিসি গত অক্টোবরে এই খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হকের মতে, বারভিডার কোনো সদস্যই এখনো সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে তহবিল পায়নি।
গত জুনে কোভিড-১৯’র কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায়ীরা ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা দাবি করে।
আবদুল হক জানান, বারভিডায় ৮৭০ এর বেশি সদস্য রয়েছেন, যারা আয়কর প্রদান করেন। এই সদস্যরা গত ৩০ বছরে এই খাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
মান্নান চৌধুরী খসরু জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন গাড়ি প্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
তিনি আরও জানান, করোনায় দেশে দুই মাস বন্ধ থাকাকালীনও আমদানিকারকরা এই ভাড়ায় কোনো ছাড় পাননি।
আমদানিকারকরা নগদ অর্থের সংকটে থাকায় মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ছয় হাজার গাড়ি আটকা পড়েছে।
Comments