তাজরীন ট্র্যাজেডির ৮ বছর: নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন
২০১২ সালের এই দিনে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোশাক-শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়েছিলেন দুই শতাধিক। দেশের পোশাকশিল্পে এটিই অগ্নিকাণ্ডের সর্বোচ্চ হতাহতের ঘটনা।
আজ মঙ্গলবার তাজরীন ট্র্যাজেডির আট বছরে কারখানাটির সামনে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আজ প্রথম প্রহরে কারখানা ফটকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পোশাক-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স টেইলার্স লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে সময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও নীরবতা পালন করা হয়।
শ্রদ্ধানিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, তাজরীন ট্র্যাজেডির আট বছর পূর্ণ হলেও এখনো পর্যন্ত আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি, শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা হয়নি, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি এবং তাজরীন ফ্যাশনের মালিকসহ দোষীদের বিচারকার্য শেষ করা হয়নি।
তাজরীন ট্র্যাজেডিটে আহত শ্রমিক সবিতা রানী বলেন, ‘তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের পর আমাদেরকে নামমাত্র কিছু টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ক্ষতিপূরণ এখনো দেওয়া হয়নি।
আহত প্রায় শতাধিক শ্রমিক দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে উল্লেখ করে সবিতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ আমারা দাবি জানিয়ে আসছি আমাদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক। কিন্তু, আমাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি।’
‘কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফলতিতে এতগুলো শ্রমিকের প্রাণ গেল এবং আমরা এতগুলো শ্রমিকর আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারালাম। কিন্তু, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এখনো নিশ্চিত হয়নি’, বলেন সবিতা। অবিলম্বে কারখানার মালিক দেলোয়ারসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
গার্মেন্টস-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার আট বছর পার হলেও এখনো দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। এতে সরকারের অবস্থানটি স্পষ্ট। এ কারণে পরবর্তীতে রানা প্লাজা ধসে আবারও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাজরীনে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক দাবি আদায়ে অনশন করলেও সরকার ও সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করছে না।’
অবিলম্বে তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার এবং পুড়ে যাওয়া ভবনটি সংস্কার করে শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।
মামলার অগ্রগতি
তাজরীন ট্র্যাজিডির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ কয়েক জন কারখানা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আশুরিয়া থানায় দুটি আলাদা মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা দুটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এ চলমান রয়েছে।
মামলার অগ্রগতি সম্প্রর্কে গার্মেন্টস-শ্রমিক ট্রেইলার্স লীগের সভাপতি (সাভার-আশুলিয়া কমিটির) রাকিব হাসান সোহাগ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মামলার অধিকাংশ সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা। গত ১৭ অক্টোবর আদালত বসার কথা ছিল। কয়েকজন শ্রমিক (প্রত্যক্ষদর্শী) ওই দিন আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই দিন আদালত বসেনি।’
তাজরীনের মালিক দেলোয়ারকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ছয় মাস কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে বের হন। এখনো তিনি জামিনে রয়েছেন।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজনের ভাই উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি পরে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ স্থানান্তর করা হয়।
Comments