স্মরণ

‘শুয়া চান পাখি’র শিল্পী বারী সিদ্দিকীর প্রয়াণের ৩ বছর

bari_siddiqui
প্রয়াত বারী সিদ্দিকী। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

দরদমাখা কণ্ঠে তিনি মুগ্ধ করতেন শ্রোতাদের। সেই দরদিয়া কণ্ঠশিল্পী, বাঁশির যাদুকর বারী সিদ্দিকী ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর  পাড়ি জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। মুগ্ধকরা এই শিল্পীর চলে যাওয়ার তিন বছর আজ।

তার পুরো নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখার হাতেখড়ি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।

ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় বারি সিদ্দিকীকে দেখে আরও প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এরপর, ছয় বছর ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী।

এরপর, ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতে পড়াশোনা শুরু করেন বারী সিদ্দিকী। পরবর্তীতে বাঁশির প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠায় তিনি বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রশিক্ষণ নেন।

 নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনেতে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে লোকগীতির সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন বারী।

সেসময় নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বারী সিদ্দিকীর পরিচয় হয়। হুমায়ূনের নাটক-সিনেমায় গান করায় বারীর পরিচয় আরও ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে বারী সিদ্দিকী  দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আমার গাওয়ার পেছনে অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই আমি সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছি।’

১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন বারী সিদ্দিকী। এরপর, ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তার পরিচয় ও শ্রোতাপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। তারপর, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগদান করেন তিনি।

বারী সিদ্দিকী বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত পরিচালক ও মুখ্য বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বারী সিদ্দিকীর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে- ‘শুয়া চান পাখি আমার’, ‘পূবালী বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘রজনী হইস না অবসান’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘ঘরেও জ্বালা বাইরেও জ্বালা’, ‘আমার মন্দ স্বভাব জেনেও’, ‘মরার আগে মনটা মরে গেলো’, ‘এই পৃথিবী যেমন আছে’, ‘মাটির দেহ’, ‘অপরাধী হলেও আমি তোর’, ‘একটু মাটি দেনা’, ‘বড় বেশি মন্দ আমি’, ‘মনের দুঃখ মনেই রইলো’, ‘তুমি না থাকলে’, ‘মনটা যদি টাকার মতো’, ‘পাপী আমি’, ‘মাটির দেহ ক্ষয় করিলাম’, ‘আমার অনেক বাঁশের বাঁশী আছে’ ইত্যাদি।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনায়  জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী।

Comments

The Daily Star  | English

Cumilla rape: Main accused among two more arrested

Three others were arrested in the same case early today

16m ago