বলিউডের নতুন সিনেমা বাংলাদেশে, শিল্পী-পরিচালকদের প্রতিক্রিয়া

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সিনেমা হলে বলিউডের নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে। এতে দেশের সিনেমা হলেও ভারতের সঙ্গে একযোগে নতুন ছবি মুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
Film Final.jpg
বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, চিত্রনায়ক শাকিব খান, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু এবং পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সিনেমা হলে বলিউডের নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে। এতে দেশের সিনেমা হলেও ভারতের সঙ্গে একযোগে নতুন ছবি মুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ের সুযোগ থাকলেও, বাংলাদেশের সিনেমা হলে হিন্দি ছবির প্রদর্শন হয় ২০১৫ সালে। সেসময় বলিউডের পুরনো সিনেমা আসা বন্ধের দাবিতে চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীরা কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নেমেছিলেন।

২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার কয়েকটি সিনেমা হলে মুক্তি পায় বলিউডের সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’। এই সিনেমা আমদানি করেছিল ইনউইন এন্টারপ্রাইজ। এ সিনেমা ছাড়াও বলিউডের ‘তারে জমিন পার’, ‘থ্রি ইডিয়টস’ ও ‘ধুম থ্রি’ মুক্তি পেয়েছিল তখন।

চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের ব্যানারে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা মানববন্ধন করেন। মামলা ও কর্মবিরতির কারণে সেসময় বলিউডের চলচ্চিত্র এ দেশে আসা ও প্রদর্শন বন্ধ হয়েছিল। যদিও তখন বলিউডের পুরনো সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল।

এখন ভারতে মুক্তির দিনই বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে বলিউডের সিনেমা। সাফটা চুক্তিকে কিছুটা ‘আপগ্রেড’ করে এমন পথেই হাঁটছেন বাংলাদেশের সিনেমা হল মালিকরা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গ্রিন সিগন্যালও পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দেশে অনেকগুলো হল বন্ধ। দর্শক আসছে না হলে। সারাদেশে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কনটেন্ট সংকট, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সারাদেশের হল মালিকরা একমত হয়েছি, আমরা ভারতের ছবি নিয়ে আসব। এর আগে, মামলা-মোকদ্দমা করে পুরনো হিন্দি সিনেমা নিয়ে এসেছি। কিন্তু পুরনো কোনো সিনেমা আমরা আর আনতে চাই না। আমরা চাই, বলিউড ও কলকাতার সিনেমা যেদিন মুক্তি পাবে, আমাদের এখানেও একই দিন মুক্তি পাবে। করোনা মহামারিতে তো অবস্থা আরও খারাপ। সবকিছু বিবেচনা করে বলিউডের সিনেমা আমদানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সিনেমা হল বাঁচাতে হলে ভালো ছবি লাগবেই। বিশ্বের অনেক নামি সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে করোনা মহামারিতে। আমাদের এখানেও অবস্থা খারাপ। ভারতীয় নতুন ছবি পরীক্ষামূলক চালানো যেতে পারে। সিনেমা হল বাঁচাতে পারব কি না জানি না। দর্শকের কাছ থেকে যদি ইতিবাচক সাড়া না মেলে, তাহলে বলিউডের সিনেমা মুক্তি দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।’

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘বলিউডের ছবি আমাদের এখানে মুক্তি পেলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বলিউডের দেড়শ কোটি রুপি বাজেটের ছবির সঙ্গে বাংলাদেশের এতো কম বাজেটের ছবি টিকতে পারবে না। একটি বড় ধরনের প্রতিযোগিতার সঙ্গে পড়ে যাবে আমাদের চলচ্চিত্র। এইভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব।’

Film-3.jpg
বলিউডের পুরনো চলচ্চিত্র আসা বন্ধের দাবিতে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীদের আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

শাকিব খান আরও বলেন, ‘উপমহাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে কিন্তু অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক মিল থাকলেও বলিউডের ছবির বাজেট অনেক বেশি। আমরা এর ধারে কাছেও নেই। হিন্দি ছবির প্রভাবে শ্রীলংকার চলচ্চিত্র হারিয়ে গেছে। নেপালের চলচ্চিত্রও ধ্বংস হয়ে গেছে।’

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের ব্যর্থতায় কারণেই এমনটি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যেমন মনখারাপ হচ্ছে, তেমনি আবার বাস্তবতাকে অস্বীকারও করতে পারি না। সিনেমা হলগুলো যদি ভালো-মানসম্মত সিনেমা না পায়, তাহলে কী করবে। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে মার্কেট হয়ে যাবে। বলিউডের ছবি কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে দেখি, দেখে আসছি। একসময় ডিশের মাধ্যমে দেখেছি। এখন হিন্দি সিনেমা মুক্তির পরের দিনই বা দুদিনের মধ্যে আমরা পাইরেটেড কপি দেখছি। বলিউডের সিনেমা দেখা কিন্তু আমাদের থেমে নেই। নেটফ্লিক্স, হইচই প্ল্যাটফর্মে আমরা দেখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। যারা ব্যর্থ হবে তারা টিকতে পারবে না। আন্তর্জাতিক মানের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। মানসম্মত কাজ করতে হবে, না হলে আগামীতে আরও কিছু আসবে। এইসব ভাবতে হবে। ভালো কাজের দিকে বেশি মন দিতে হবে। বিগত কয়েক বছরে কয়টি ব্যবসাসফল সিনেমা দিয়েছি আমরা? এইগুলো আমাদের ব্যর্থতার ফসল।’

পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘আমি চাই বলিউডের সিনেমা আসুক। একটি প্রতিযোগিতা হোক আমাদের মধ্যে। তাহলে ভালো সিনেমা নির্মিত হবে। ভালো সিনেমা ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারবে না। যারা ভালো ছবি বানাবে শুধু তারা টিকে যাবে। সব ভাষার ছবি আসুক আমাদের এখানে। তাহলে মানসম্মত ছবি নির্মাণ আরও বাড়বে। তাই আমি চাই, বলিউডের ছবি মুক্তি পাক আমাদের এখানে।’

প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘বলিউডের ছবির বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা মনে করি যে, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মরে যাচ্ছে, এই ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য যদি সরকার আমাদের সিনেমা আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা আছি। যদি বলা হয় ভারতে মুক্তির তিন মাস পর আমাদের দেশে আমদানি করতে হবে, তাহলে আমি বলব- আমাদের দেশীয় টাকা অপচয় হবে। আমরা চাই সমসাময়িক মুক্তি। কারণ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি, সিনেমা হল বাঁচাতে হলে এটি করতে হবে।’

পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব ভাষার ছবি আমাদের এখানকার সিনেমা হলে মুক্তি পাক। কেননা সবকিছু  একটি বিন্দুতে এসে মিলেছে। তবে বলিউডের হিন্দি সিনেমা মুক্তির বিষয়ে আমার কিছু কথা আছে। আমাদের এখানে সবখানেই হিন্দি গানের জোয়ার। গ্রাম থেকে শহরে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে হিন্দি গানের প্রাধান্য দেখা যায়। মানুষ হিন্দি সিনেমার খবর বেশি রাখে। হলিউডের ছবির বিষয়ে তেমন কথা শোনা যায় না। হিন্দি সিনেমা মুক্তি বিষয়ে সরকারের কিছু স্বচ্ছ নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। টিকিটের দাম থেকে শুরু করে মূল্য সংযোজন কর বিষয়ে অবশ্যই পার্থক্য থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে শুধু বলিউড কেন? ইরানি, কোরিয়ান ভাষার ছবিও মুক্তি দেওয়া হোক। তবে সব দেশের ছবির অবশ্যই বাংলা সাব টাইটেল থাকতে হবে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা- আমাদের দেশের দর্শক সিনেমা হলে বলিউডের চেয়ে ভালো বাংলা সিনেমা দেখতে বেশি পছন্দ করেন। নিয়মনীতির বিষয়ে কঠোর হতে হবে। তাহলে সব ভাষার ছবি মুক্তি পেলেও কোনো সমস্যা নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

6m ago