লক্ষ মানুষের ভালোবাসায় ম্যারাডোনার শেষ বিদায়
বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফুটতেই বুয়েন্স আইরেস শহরের সব পথ দিয়ে মিলল কাসা রসাদায়। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের এই ভবনেই যে রাখা হয়েছিল মানুষের নায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনার মরদেহ। ভক্ত, সমর্থকরা তার কফিন একবার দেখতে, ভালোবাসা জানাতে ধরেছিলেন বিশাল লাইন। কয়েকঘন্টা ধরে চলে সেই আয়োজন।
লক্ষ মানুষ করোনাভাইরাসের প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ধরেছিলেন মাতম। ম্যারাডোনার নাম নিয়ে, ম্যারাডোনার জার্সি পরে মিছিলের স্রোত এগিয়েছে বিদায় জানানোর পথে।
কাসা রসাদায় ম্যারাডোনার কফিন ঢাকা ছিল আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে। তাতে ভক্তরা ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন ভালোবাসার ১০ নম্বর জার্সি। যা একসময় হয়ে যায় স্তুপ। কেউ দিয়ে ভালোবাসা লেখা কোন কাগজ, কারো বা দেওয়ার ছিল গোলাপ। বোকা জুনিয়র্সের জার্সি ও পতাকা, আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকার ছিল সমারোহ। হাজার হাজার মানুষের টুপিতে লেখা ছিল, 'আদিয়র, মি হিরোওই' অর্থাৎ 'বিদায়, আমার নায়ক।' বুকে চাপড় দিচ্ছিলেন, কেউ হাত উঁচিয়ে ধরছিলেন। কান্না, ভালোবাসা সব একাকার হয়ে তৈরি করছিল এক অদ্ভুত মুহূর্ত।
সকালে রাষ্ট্রপতির ভবন ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়ার পরই ঘটে বিস্ফোরক কাণ্ড। বিপুল মানুষের স্রোত সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর তৈরি করা হয় লাইন।
সেই লাইন ধরে মানুষের প্রবেশের স্রোত যেন ফুরোচ্ছিলই না। অনেকেই কফিনের কাছে এসে ম্যারাডোনার ১০ নম্বর জার্সি ছুঁড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকে ম্যারাডোনার নাম ধরে দিতে থাকেন চিৎকার। ক্র্যাচে ভর দিয়ে আসতে দেখা গেছে শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা বহু মানুষকে।
মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আগেই ম্যারাডোনার পরিবার ও বন্ধুরা আলাদাভাবে প্রিয় এই মানুষকে জানিয়েছেন বিদায়।
এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ ঘোষণা করেন তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। আর্জেন্টাইন গণমাধ্যমগুলো জানায়, বৃহস্পতিবার পুরো দেশই ছিল শোকের চাদরে ঢাকা।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা ক্রীড়াজগত। এই ফুটবল জাদুকরের মৃত্যুর কারণ জানতে করা হয়েছিল অটোসপি। এএফপির আর্জেন্টিনা মুখপাত্র জানিয়েছে, তার মৃত্যু হয়েছে একুইট হার্ট ফেইলরে।
বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতার পর বুয়েন্স আইরেসের সিমেট্রিতে বাবা-মায়ের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
আরও পড়ুন-‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর’
আরও পড়ুন- বিশ্বকাপে যেসব পরিসংখ্যানে ঝলমল ম্যারাডোনার নাম
আরও পড়ুন- একদিন আকাশে আমরা একসঙ্গে খেলব: পেলে
আরও পড়ুন- বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু দিনেই বিদায় নিলেন ‘ফুটবলের চে’
আরও পড়ুন- 'ফিফার ১০ নম্বর জার্সি তুলে রাখা উচিৎ'
Comments