পুলিশি বাধা সত্ত্বেও ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচিতে কয়েক হাজার কৃষক
পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘর্ষের পরেও বিতর্কিত কৃষি সংস্কার বিল বাতিলের দাবিতে দিল্লি অভিমুখে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচিতে অংশ দিতে হরিয়ানায় পুলিশি বাধা ভেঙে শুক্রবার সকালে পাঞ্জাবের কয়েকটি দল দিল্লির দুটি সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার নতুন কৃষিসংস্কার বিল বাতিলের দাবিতে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, কেরালা ও পাঞ্জাব- এই ছয় রাজ্য থেকে কৃষকরা দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আন্দোলনকারী কৃষকদের বাঁধা দিতে হরিয়ানায় পুলিশি ব্যারিকেড এবং দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, আন্দোলনকারীরা দিল্লির দিকে এগোতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়ে।
শুক্রবার দুটি কৃষক সংগঠন জানিয়েছে, পুলিশি বাধা সত্ত্বেও শুক্রবার দিল্লি অভিমুখে কৃষকদের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। হরিয়ানা থেকে ৫০ হাজার কৃষক দিল্লি সীমান্তে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে দিল্লিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার কৃষকের এই আন্দোলনের মুখে দিল্লির নয়টি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ব্যবহারের জন্য দিল্লি সরকারের অনুমতি চেয়েছে পুলিশ। তবে, পুলিশের ওই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে দিল্লি সরকার।
দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন এক বিবৃতিতে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করা প্রতিটি নাগরিকের ‘সাংবিধানিক অধিকার’ এবং ‘কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত কৃষকদের দাবি অবিলম্বে মেনে নেওয়া’।
শুক্রবার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর আন্দোলনরত কৃষকদের আশ্বাস দিয়ে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
গত সেপ্টেম্বরে ভারতের পার্লামেন্টে তিনটি কৃষিসংস্কার বিল পাশ হয়। এর প্রথমটিতে সরকার নিয়ন্ত্রিত পাইকারি কৃষিবাজারগুলো বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় বিলে ফসলের আগে থেকে ঠিক করে রাখা দামে চুক্তিভিত্তিক চাষ বা কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের পথ প্রশস্ত করার কথা বলা হয়েছে এবং ব্যবসায়ী বা উৎপাদকদের ফসল মজুদ করার উপর সরকারি যে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বর্তমান আছে তৃতীয় বিলে সেটা বিলোপের কথা বলা হয়েছে।
কৃষকদের দাবি, নতুন এই বিলগুলো তাদের স্বার্থ বিরোধী। কারণ, এর ফলে প্রাইভেট ফার্মগুলো কৃষিখাতে চালকের ভূমিকায় চলে যাবে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ভারতে বেশিরভাগ কৃষক তাদের ফসলের একটি বড় অংশ সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম দামে (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইজ-এমএসপি) সরকার নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন।
কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন বিলের ফলে এমএসপি-র অস্তিত্ব থাকবে না এবং ব্যবসায়ীদের হাতে ফসলের দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা চলে যাবে। ফলে তারা ফসলের ন্যায্যদাম থেকে বঞ্চিত হবেন।
তবে, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দাবি, কৃষকদের এই আশঙ্কা অমূলক। বরং কৃষিখাতে উৎপাদন ও আয় বাড়াতে এই সংস্কার জরুরি।
এদিকে, ওই তিনটি কৃষিসংস্কার বিল বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের আন্দোলনকারী কৃষকরা।
Comments