গুলিত ‘ষাঁড়’-বাতিস্তুতা ‘পশু’, বিখ্যাত ফুটবলারদের নিয়ে ম্যারাডোনার যত মন্তব্য

maradona 1986
ছবি: এএফপি

মাঠে ও মাঠের বাইরে বর্ণময় চরিত্র ছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার প্রয়াত এই কিংবদন্তি ফুটবলার নিজের মনের কথা প্রকাশ করতেন অসংকোচে। বিখ্যাত ফুটবলারদের সম্পর্কে ম্যারাডোনার ছিল নিজস্ব বিশ্লেষণ ও অভিমত। তার উল্লেখযোগ্য ও চমকপ্রদ কিছু মন্তব্য স্থান পেয়েছে শেখ রানার অনুবাদ গ্রন্থ ‘ফুটবল ইতিহাসের বিতর্কিত এক মহাতারকার আত্মজীবনী: ম্যারাডোনা’ বইতে, যা তুলে ধরা হচ্ছে দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।

মিশেল প্লাতিনি (ফ্রান্স)

দুর্দান্ত স্কিলের এক মহাতারকা। ইতালির ক্লাব ফুটবলে সে সম্ভাব্য সব কিছু জিতে নিয়েছে। কিন্তু জানি না কেন, আমার কাছে মনে হতো, ও যেন ফুটবল খেলাটা ঠিক উপভোগ করছে না। খুব শীতল মনে হতো ওকে। সবসময়।

জিকো (ব্রাজিল)

খেলার একজন সার্থক উদাহরণ। পেলের ১০ নম্বর জার্সি জিকোর গায়ে সবচাইতে ভালোভাবে মানিয়ে গেছে। একজন নেতা হিসেবেও সে অনন্য। রোমাঞ্চকর ও অসাধারণ এক খেলোয়াড় জিকো।

হোসে লুইস চিলাভার্ট (প্যারাগুয়ে)

আজ এক কথা, কাল আরেক কথা- এরকম যারা, তাদের সঙ্গে আমার মিল নেই, তবুও চিলাভার্টকে আমি দুর্দান্ত গোলরক্ষক মনে করি। ওকে যখন আদালত শাস্তি দিলো, আমি ওকে ফোন করেছিলাম একটাই কারণে যে, আমার মনে হয়েছে, এই শাস্তি ওর প্রাপ্য নয়। ও আমার মতো নয় কিংবা আমার সঙ্গে যায় না, তবুও এটা বলতে আমার দ্বিধা নেই যে, ও শুধু দুর্দান্ত গোলরক্ষকই নয়, বরং ফ্রি-কিক নিতেও সমান পারদর্শী।

রোনালদো (ব্রাজিল)

এই ছেলেটা দারুণ একজন খেলোয়াড়। কিন্তু খ্যাতির মায়াজালে বন্দি হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞাপনের মোহ আর মন্ত্র ওর মাথায় এমনভাবে ঢুকে গিয়েছিল যে, সেই ৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের ফাইনালের ঠিক আগে ও কী কারণে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল... অ্যাজমা?

রুদ গুলিত (নেদারল্যান্ডস)

একটা ষাঁড়। টেকনিক্যাল স্কিলের চেয়ে সে সবসময় জান্তব শক্তিকেই বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই শক্তি আর শারীরিক সক্ষমতাই তাকে লড়াকু করেছে সবার চেয়ে বেশি।

গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা)

একটা পশু। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ পশুটা আর্জেন্টাইন। আমাদের ফুটবল ওকে ঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। আমরা কজন যদি ওকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে শোরগোল না তুলতাম, ৯৮ বিশ্বকাপে প্যাসারেলা ওকে দলে নিত কিনা সন্দেহ।

রবার্তো ব্যাজিও (ইতালি)

এল দিভানো (এ নামেই ওকে ইতালিতে ডাকা হতো)। একজন দারুণ খেলোয়াড়। আমার কেন যেন মনে হয় ফুটবল খেলায় সে তার সামর্থ্য পুরোটা ঢেলে দেয়নি। তারপরও সে দারুণ।

গ্যারি লিনেকার (ইংল্যান্ড)

দারুণ এক গোলস্কোরার। কিন্তু সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি দূর যেতে পারেনি।

জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)

আমি সবসময় জিদানকে সমর্থন করতাম। কারণ, ওকে দেখে আমার মনে হতো, ফুটবল নিয়ে ওর ভাবনা সবার চেয়ে আলাদা। কিন্তু পরে আমার মনে হয়েছিল, ও নিয়মিত ফুটবল খেলে যাওয়াটা ঠিক উপভোগ করে না। একদম (মিশেল) প্লাতিনির মতো; আনন্দবিহীন ফুটবল। দুজনের কেউই আনন্দ নিয়ে ফুটবল খেলেনি।

মাইকেল ওয়েন (ইংল্যান্ড)

আমার কাছে ওয়েন হলো ৯৮ বিশ্বকাপের একমাত্র ভালো কিছু দেখতে পাওয়া। গতি, চতুরতা আর সাহস। আশা করি, আঘাত ওকে পুরোপুরি পর্যদুস্ত করে দেয়নি।

লোথার ম্যাথিয়াস (জার্মানি)

আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী। এই একটা বাক্যই ম্যাথিয়াসকে বোঝানোর জন্য যথেষ্ট।

জর্জ ভালদানো (আর্জেন্টিনা)

অনন্যসাধারণ একজন মানুষ। একসঙ্গে খেলা কিংবা আড্ডা দেওয়া- আমি সবসময় উপভোগ করেছি। আমার সবসময়ের পছন্দের একজন।

ক্লদিও ক্যানিজিয়া (আর্জেন্টিনা)

ক্যানিকে আমি আপন ভাইয়ের মতো ভালোবাসতাম। প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল, ওকে আগলে রাখতে হবে। মাঠে ওর হঠাৎ গতি পরিবর্তন আমি অন্য কারও ভিতর দেখিনি। মানুষের হৃদয়ে আমার জায়গাটা যদি কেউ নিয়ে থাকে, সেটা হলো ক্যানিজিয়া।

পাওলো রসি (ইতালি)

কাউন্টার অ্যাটাকের শিল্পী। এই ইতালিয়ান গোল কাকে বলে খুব ভালোভাবে জানত আর ৮২ বিশ্বকাপে ওর সাহসিকতার পরিচয় পুরো বিশ্বকে জানিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ও জানিয়েছিল নাপোলির বিপক্ষে কখনো খেলবে না। একটু বেশি আভিজাত্য ছিল ওর ভিতর।

সার্জিও গয়কোচিয়া (আর্জেন্টিনা)

রোমাঞ্চকর এক চরিত্র। ইতালি ৯০ বিশ্বকাপে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেছিল। আর্জেন্টিনার সবাই ওক ভালোবাসে।

রেনে হিগুইতা (কলম্বিয়া)

খ্যাপাটে এক বর্ণময় চরিত্র। আমি আগেও বলেছি, একজন গোলরক্ষক যে গোলবার ছেড়ে ফ্রি-কিক নিতে পারে, পেনাল্টি নিতে পারে এমনকি গোল করতে পারে- এই উদ্ভাবন রেনে হিগুইতার। সুতরাং, ওর কৃতিত্ব অন্য কারও না নেওয়াই ভালো।

হুয়ান ভেরন (আর্জেন্টিনা)

আর্জেন্টিনার ফুটবলের সেরাদের একজন। দৃঢ় মানসিকতার একজন মানুষ। ও ফুটবল খেলত মাঠ বড় করে। আমার সম্পর্কে কিছু কথা ও এমন বাজেভাবে বলেছিল যে, আজ পর্যন্ত ওর আর আমার সম্পর্কটা একটা সমাধানে পৌঁছাল না। ওই একটা কারণেই।

জর্জ বুরুচাগা (আর্জেন্টিনা)

আমার বিবেচনা নিয়ে কি প্রশ্ন তোলা ঠিক? আধুনিক ফুটবলারের সার্থক উদাহরণ হয়েছিল বুরুচাগা। মেক্সিকো ৮৬ বিশ্বকাপে আমার লেফটেন্যান্ট বুরু- এ রকম বলত লোকে। আসলেই তাই! অনেক সাহায্য করেছিল আমাকে। মাঠে আমার গুরুদায়িত্বের অনেকটাই ও বহন করেছিল সার্থকভাবে।

পিটার শিলটন (ইংল্যান্ড)

প্রথম গোল না হয় মাথা এলোমেলো করে দিয়েছে কিন্তু আমার দ্বিতীয় গোলটা? শিলটন, সেটা কি তোমার চোখে পড়ে না? ওর বিদায়ী ম্যাচে আমাকে আমন্ত্রণ জানায়নি... বাপরে! মোড়ে গেছি আমি! একজন গোলরক্ষকের বিদায়ী ম্যাচে কয়জন যায় বলুন দেখি!

ডেভিড বেকহ্যাম (ইংল্যান্ড)

এই আরেকজন! মাঠে খেলার জন্য একটু বেশিই সুন্দর। যদিও ওর স্পাইস গার্লের জন্য একটু বেশি চিন্তিত থাকত, তবুও এখনও যদি খেলতে নামে দুর্দান্ত খেলবে। ওর পায়ের টাচ অসাধারণ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জিতেছে। ফ্রান্স ৯৮-এ (দিয়েগো) সিমিওনে ওকে যে দুর্ভাগ্য উপহার দিয়েছিল, তা তো হজম করতেই হয়েছে। কিন্তু বেকহ্যাম পরে আমাদের তা ফিরিয়েও দিয়েছে।

মার্কো ভ্যান বাস্তেন (নেদারল্যান্ডস)

গোল স্কোরিং মেশিন। যখন সর্বকালের সেরা হওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন, ঠিক তখনই সে হারিয়ে গেল। সে অসম্ভব প্রতিভাবান খেলোয়াড়, কিন্তু এক নম্বর হতে পারল না।

রোমারিও (ব্রাজিল)

দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়। ওর মতো ফিনিশার আমি আর অন্তত দেখিনি। ডি-বক্সের ভিরত এত দ্রুত অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড-কারখানা করত! সে যখন গোলের জন্য দৌড়াবে, বিপক্ষ দলের সর্বনাশ। ওর দক্ষতা নিয়ে আমার দ্বিমত নেই একদম। আমার স্বপ্নের একাদশের একজন খেলোয়াড় রোমারিও।

ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (জার্মানি)

আমি যখন একদম ছোট, ৭৯ যুব বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন বেকেনবাওয়ারের সঙ্গে প্রথম দেখা। ততদিনে ও মহাতারকা, কসমসের পক্ষে চুটিয়ে খেলছে। ওর আভিজাত্যপূর্ণ ফুটবল খেলার সবসময়ের ভক্ত আমি।

সক্রেটিস (ব্রাজিল)

ফুটবলে খেলার স্টাইলে অন্য সবার চেয়ে আলাদা- সেই প্রসঙ্গ সরিয়ে রাখলেও যেটা সক্রেটিস সম্পর্কে আগে বলতে হয়, তা হলো আমার মতোই ফুটবলারদের স্বার্থ রক্ষায় ও লড়াই চালিয়ে গেছে। এমনকি ফিফার নিষেধ সত্ত্বেও প্রতিবাদ জানাতে মাথায় ব্যান্ড পরে খেলেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Baitul Mukarram to host five Eid jamaats

Prayer times: 7am, 8am, 9am, 10am, 10:45am

10m ago