ইতালিতে আবারও ১০০ টাকায় বাড়ি

চলতি বছরের শুরুতে ইতালিতে ১০০ টাকায় বাড়ি বিক্রির সংবাদ ছাপা হয়েছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। বছর শেষে আবারও এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
castropignano
ইতালির রাজধানী রোম থেকে ১৪০ মাইল দক্ষিণপূর্বে মলিস অঞ্চলের এই কাসত্রোপিগনানো গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়িগুলো এক ইউরোতে নতুন বাসিন্দাদের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের শুরুতে ইতালিতে ১০০ টাকায় বাড়ি বিক্রির সংবাদ ছাপা হয়েছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। বছর শেষে আবারও এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

গতকাল রোববার মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইতালিতে আবারও এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রি হচ্ছে। তবে এটি অন্য আরেকটি গ্রামে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০ টাকায় বাড়ি বিক্রি হচ্ছে ইতালির দক্ষিণে মলিস অঞ্চলে।

রাজধানী রোম থেকে ১৪০ মাইল দক্ষিণপূর্বে মলিস অঞ্চলের কাসত্রোপিগনানো গ্রামে পরিত্যক্ত বাড়িগুলো এক ইউরোতে নতুন বাসিন্দাদের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, গত মাসে সিসিলির সালেমি ও আবরুজ্জোর সান্তো স্তেফানো দি সেসানিওতে নতুন বাসিন্দাদের কাছে বাড়ি বিক্রির ঘোষণার পর এবার মলিসে বাড়ি বিক্রির ঘোষণা এলো।

তবে ইতালির অন্যান্য অঞ্চলে এক ইউরো থেকে এক ইউরো ২০ সেন্টে পরিত্যক্ত বাড়ি বিক্রির যে স্কিম রয়েছে তা একটু ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করতে চান কাসত্রোপিগনানো গ্রামের বাসিন্দারা।

কাসত্রোপিগনানো গ্রামে বাড়ি বিক্রির বিষয়টি ইতালির দূতাবাসগুলোকে জানানো হয়েছে। এখানে যে কোনো দেশের নাগরিক বাড়ি কিনতে পারবেন।

তবে যে কেউ চাইলেই বাড়ি কিনে ফেলতে পারবেন বিষয়টি এমন নয়। আগ্রহী ব্যক্তিকে মেয়র নিকোলা স্কাপিল্লাতির কাছে ইমেল করে জানাতে হবে তার বাড়ি কেনার উদ্দেশ্য কী, তিনি বাড়িটি ব্যবহার করবেন— ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা। মেয়র আগ্রহী ব্যক্তিদের ভেতর থেকে বেছে নিবেন ১০০ সম্ভাব্য ক্রেতাকে।

‘গ্রামটিতে ১০০টির মতো পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে’ উল্লেখ করে মেয়র নিকোলা স্কাপিল্লাতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা এখানে বাড়ি বিক্রির স্কিমটি একটু ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই।’

‘আমরা চাই না, কম দামে বাড়ি বিক্রির সংবাদে আমাদের শহরে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ুক। তাই আমরা ধীরে ধীরে সম্ভাব্য ক্রেতাদের বেছে নিব।’

তিনি জানিয়েছেন, ‘যারা বাড়ি কিনতে আগ্রহী তাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। তবে আমাকে সরাসরি (nicola.scapillati[AT]me.com) এই ঠিকানায় ইমেল করতে হবে। ইমেলে তাদের বাড়ি কেনার উদ্দেশ্য ও বাড়ি দিয়ে তারা কী করতে চান তা বিস্তারিত জানাতে হবে।’

গ্রামের রাস্তাগুলো খুবই সংকীর্ণ তাই গাড়ি নিয়ে চলাচলের সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিষয়টিকে আরও আনুষ্ঠানিক করতে মেয়র স্কাপিল্লাতি বিদেশে ইতালির দূতাবাসগুলোকে এ বিষয়ে নোটিশ পাঠিয়েছেন।

মেয়র আরও জানিয়েছেন, যিনি বাড়ি কিনবেন তাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। যেমন, বাড়ি কেনার তিন বছরের মধ্যে তা সংস্কার করতে হবে। গ্যারান্টি পেমেন্ট হিসেবে দুই হাজার ইউরো দিতে হবে। এই অর্থ বাড়ি সংস্কারের পর ফেরত দেওয়া হবে।

তার মতে, বাড়িগুলো এতো জরাজীর্ণ যে যে কোন মুহূর্তে তা ধসে পড়তে পারে। তাই সংস্কার ছাড়া বাড়িগুলোতে বসবাসের কোনো সুযোগ নেই।

ইতোমধ্যে ইউরোপ থেকে বেশ কয়েকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন মেয়র।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাসত্রোপিগনানো কোনো জমজমাট গ্রাম নয়। এখানে একটি মাত্র রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে— একটি পানশালা, একটি ওষুধের দোকান ও কয়েকটি ছোট ছোট আবাসিক হোটেল। সব মিলিয়ে এটি একটি নিভৃত গ্রাম।

গ্রামের অধিবাসীর সংখ্যা ১৯৩০ সালে ছিল প্রায় আড়াই হাজার। এখন তা কমে ৯০০ তে এসে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই গ্রামের অধিবাসীরা উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে তরুণরা কাজের জন্যে বড় বড় শহরে চলে যেতে শুরু করলে ধীরে ধীরে এটি একটি নির্জন গ্রামে পরিণত হয়।

এখন গ্রামের ৬০ শতাংশ অধিবাসীর বয়স ৭০ বছরের বেশি।

মেয়র নিকোলা স্কাপিল্লাতি বলেছেন, ‘আমি আপনাদের বিশাল কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। বরং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি নীরবতা ও প্রশান্তির। গ্রামের বাতাস পরিচ্ছন্ন। দিনের ক্লান্তি কাটানোর জন্যে রয়েছে নির্মল প্রকৃতি ও সমৃদ্ধ খাবার।’

নিভৃত এই গ্রামটিকে আবার জাগিয়ে তুলতে চান মেয়র। তিনি জানিয়েছেন একটি বাড়ি পুরোটা সংস্কার করতে নূন্যতম ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ইউরোর দরকার হবে। ইতালিতে যারা কর দেন তারা এখানে বাড়ি কিনতে চাইলে পরিবেশবান্ধব বাড়ির জন্যে রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

মাত্র ১০০ টাকায় ইতালিতে বাড়ি!

Comments

The Daily Star  | English

Cyclone Remal: Elderly man dies en route to shelter in Satkhira

He slipped and fell on the road while going to Napitkhali shelter with his wife on a cycle around 6:30pm

1h ago