ব্রহ্মপুত্রের বুকে হারিয়ে গেল চর মনতলা

দুই যুগ আগে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে উঠে চর মনতলা। পরে ১২৮টি পরিবার সেখানে এসে আবাসভূমি গড়ে। শুরু হয় চরের জমি চাষ, শিশুদের জন্য স্থাপন করা হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নির্মিত হয় চর মনতলা জামে মসজিদ। এখন সেখানে নেই কোনো স্থাপনা, চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
Char Montola.jpg
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর গত চার মাসের তীব্র ভাঙনে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বিলীন হয়ে গেছে চর মনতলা। বর্তমানে সেখানে নেই কোনো স্থাপনা। ছবিটি গত ১৫ জুলাই তোলা। ছবি: স্টার

দুই যুগ আগে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে উঠে চর মনতলা। পরে ১২৮টি পরিবার সেখানে এসে আবাসভূমি গড়ে। শুরু হয় চরের জমি চাষ, শিশুদের জন্য স্থাপন করা হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নির্মিত হয় চর মনতলা জামে মসজিদ। এখন সেখানে নেই কোনো স্থাপনা, চারদিকে শুধু পানি আর পানি।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর গত চার মাসের তীব্র ভাঙনে চর মনতলা জনপদটি সম্পূর্ণরূপে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বিলীন হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর ‘চর মনতলা’। উপজেলার মুল ভূখণ্ড থেকে এই চর ছিল প্রায় সাত কিলোমিটার দুরে। এই চরে বসবাসকারী ১২৮টি পরিবারের ৬০০ মানুষ এখন বাস্তুহারা। ভিটেমাটি, আবাদি জমি ও ফলের বাগান হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে এখন অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সঞ্জু মিয়া (৪৬) জানান, তিনি চর মনতলার বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে তার ছিল দশ বিঘা আবাদি জমি, দুটি ফলের বাগান ও বসতভিটা। সবকিছু চলে গেছে ব্রহ্মপুত্রের বুকে। চর মনতলা হারিয়ে গেছে। এখন আর চর মনতলার কোনো অস্তিত্ব নেই।

‘আমি সব হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চর কড়াই বরিশালে আশ্রয় নিয়েছি। আমার ঘর তিনটি এখনো বালুর ওপর পরে আছে’, বলেন তিনি।

তিনি জানান, চর মনতলা ছিল একটি শান্তির আবাসভূমি। এখানে একে অপরের প্রতি ছিল সহানুভূতিশীল ও বন্ধুবৎসল। এখানকার অধিবাসীরা কে কোথায় গেছে, কীভাবে রয়েছে কেউ জানে না। সবাইকে চরম কষ্টে দুরবস্থার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে।

দিলজান বেওয়া (৬৭) জানান, বন্যা আর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে তার পরিবার ১৬ বছর আগে আশ্রয় নিয়েছিল চর মনতলায়। চরের কয়েক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছিল তার পরিবার। চর মনতলায় তাদের দিন ভালোই কাটছিল। কিন্তু সেটিও চলে গেল ব্রহ্মপুত্রের বুকে। কোনোরকমে চারটি ঘর ভেঙে আত্মীয়ের বাড়ি চর ঢুশমারাতে উঠেছেন। এখন তাদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।

নুর আমিন (৪৮) জানান, সুখের জীবন ছিল চর মনতলায়। অন্য সব চরের চেয়ে এই চরটি ছিল মনোরম। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এই চরে বেড়াতে আসতেন।

‘আমার বাড়ি ভিটা, আবাদি জমি ও কলার বাগান ছিল চরে। কোনোরকমে দুটি ঘর ভেঙে আত্মীয়ের বাড়ি চর বিশারবাড়িতে উঠেছি। চর মনতলার মতো সুখ আর কোথাও মিলবে না। চর মনতলা হারিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে আমাদের হাসি-আনন্দ, সুখ-শান্তি’, বলেন তিনি।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়ছুল হক মণ্ডল বলেন, ‘জুলাই মাসে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই চর মনতলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র হয়ে উঠে। গেল চার মাসে পুরো চরটি ভেঙে নদে চলে গেছে। এই চরের অধিবাসীরা কে কোথায় উঠেছেন এবং কীভাবে রয়েছেন, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago