দুর্ঘটনা এড়াতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে

ট্রেনের সংঘর্ষ ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা (এটিপিএস) চালু করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ট্রেনের সংঘর্ষ ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা (এটিপিএস) চালু করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।

এটিপিএস চালু করতে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সম্ভাব্যতা জরিপ করবে।

রেল কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের অধীনে প্রযুক্তি নির্বাচন, নির্দিষ্টকরণ এবং একটি বিস্তারিত নকশা চূড়ান্ত করবেন পরামর্শদাতারা।

এটিপিএস হলো ট্রেনের একধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ট্রেনের নির্দিষ্ট গতি সীমার ওপর লক্ষ্য রাখা এবং বিপদ সংকেত না মেনে এগিয়ে যেতে থাকলে দুর্ঘটনা এড়াতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবনার নিয়ে আলোচনা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর আগে এই খসড়া পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের রেললাইনগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ এক লাইনের। যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে মুখোমুখি সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

এটিপিএস চালু করার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় চলছিল এবং গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারাত্মক ট্রেন দুর্ঘটনার পর বিষয়টি পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।

২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর কসবার মান্দোবাগ রেলস্টেশনে ঢাকাগামী তুর্ণা নিশিতা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দেয়। এতে ১৭ যাত্রী মারা যান এবং আরও অনেকে আহত হন।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের চালক, তার সহকারী এবং গার্ডের অবহেলা খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি।

তাদের প্রতিবেদনে, ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে ‘অটোমেটিক ট্রেন স্টপ’ পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

খুলনা-মংলা বন্দর রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন এটিপিএসের জন্য এই খসড়া প্রস্তাবনাটি তৈরি করেছেন।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমেরিকা, জাপান এবং ইউরোপের দেশগুলো ইতোমধ্যে এটিএসপি চালু করেছে। সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতও এই পদ্ধতি চালু করেছে।

তিনি জানান, এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর কোনো ট্রেন যদি কর্মীদের ব্যর্থতার কারণে বিপদ বা লাল সংকেত পার হয়ে যায় তাহলে ট্রেনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যাবে এবং এতে করে সংঘর্ষে এড়ানো সম্ভব হবে।

প্রাথমিকভাবে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনটি রেল কর্তৃপক্ষ বেছে নিয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। যা ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের রেল নেটওয়ার্কে এই পদ্ধতি স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘তবে, এটিপিএস ব্যবহারের জন্য প্রথম রেললাইন নির্বাচন করতে পরামর্শদাতাদের পরামর্শ অনুসরণ করা হবে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের তিন হাজার ১৮ কিলোমিটারের সার্ভিস নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এই নেটওয়ার্কে পাঁচ ধরণের সিগন্যালিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ শাখার কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কম্পিউটারভিত্তিক ইন্টারলকিং সিস্টেমে এটিপিএসকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ৩৫৩টি সিগন্যালিং স্টেশনের মধ্যে ১১২টিতে কম্পিউটারভিত্তিক ইন্টারলকিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানকে ফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago