শিগগির ভাসানচরে স্থানান্তরিত হচ্ছে ৫০০ রোহিঙ্গা পরিবার
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরের বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ এখন পরিকল্পিত ও আধুনিক জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে সারি সারি বহুতল ভবন।
অথচ বছর তিনেক আগেও ভাসান চর দ্বীপটি জোয়ারের পানি উঠলে ডুবে যেত। সেখানে ছিল শুধু কিছু রাখাল, যারা মহিষ চরাতেন। তবে, আজ সেখানে রান্নাঘর, কৃষি খামার, আধুনিক বাজার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং বিদ্যালয়সহ ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সুবিধা আছে। আছে আধুনিক রাস্তা এবং স্যানিটেশন সুবিধা।
পাঁচ বছর আগেও যেখানে ডাকাতদের আস্তানা ছিল, আজ সেখানে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ও কিছু এইড এজেন্সি দ্বীপটিকে বিচ্ছিন্ন, বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক উল্লেখ করায় এখনো স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের অংশ হিসেবে ৫০০ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে এই দ্বীপে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী দ্বীপটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভাসানচর আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের উপপরিচালক কমান্ডার মো. আনোয়ারুল কবির অবশ্য জানান, রোহিঙ্গাদের সেখানে যাওয়ার বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য নেই।
তিনি বলেন, ‘১২০টি গুচ্ছগ্রামে প্রায় এক লাখ লোকের আবাসনের জন্য ভাসানচর প্রকল্প প্রস্তুত। আমরা রোহিঙ্গাদের আসার অপেক্ষায় আছি।’
এদিকে, গত রোববার প্রায় ২২ এনজিওর প্রতিনিধিরা দ্বীপটি পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানকার সামগ্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তারা জানান, দ্বীপটি পুরোপুরি একটি শহরে পরিণত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের বর্তমান জীবনযাত্রার তুলনায় এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো।
এই সংবাদদাতা সম্প্রতি দ্বীপটি পরিদর্শনকালে তাদের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছেন।
পালস বাংলাদেশ সোসাইটির সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী তুহিন সেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা উচিৎ। এখানে অনেক জায়গা। পরিবারগুলোর নিজস্ব জায়গা থাকবে। কক্সবাজারের তুলনায় এই জায়গা নিরাপদ।’
মাল্টি-সার্ভ ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা অস্থায়ী টয়লেট ব্যবহার করছে। সেগুলো অস্বাস্থ্যকর। ভাসানচরে সব টয়লেট স্থায়ী, কংক্রিটের এবং স্বাস্থ্যকর।’
এসএডব্লিউএবির সমন্বয়ক এস এম ইমাদুল ইসলাম কক্সবাজারের ভূমিধ্বসের ঝুঁকির কথা জানান।
‘সুতরাং, এই দ্বীপটিতে বসবাস করা তাদের জন্য আরও নিরাপদ,’ বলেন তিনি।
আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল এনজিও’র মিডিয়া সহকারী এনাম আহমেদ জানান, দ্বীপটিতে দুটি হাসপাতাল আছে এবং জরুরি অবস্থার জন্য সি-অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার আছে। সুতরাং, এখানকার চিকিত্সা ব্যবস্থা আরও ভালো।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার প্রায় ২১৩ জন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) দ্বীপটিতে গেছেন। এ ছাড়া, প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য সেখানকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে কাজ শুরু করেছে, যাদের মধ্যে ১০ জন নারী সদস্যও আছেন।
ভাসানচরের মোট আয়তন প্রায় ১৩ হাজার একর। এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ৪২৭ একর ব্যবহারযোগ্য। এই আশ্রয়ণ প্রকল্প এক হাজার ৭০২ একর জুড়ে থাকলেও গুচ্ছ গ্রামগুলো প্রায় ৪৩২ একর জমির মধ্যে তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে সরকার?
আবাসন প্রকল্প দেখতে ৪০ রোহিঙ্গা মাঝি ভাসানচরে
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠাতে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Comments