চীনের ভ্যাকসিন কবে আসবে ‘নিশ্চিত নয়’

প্রথম দেশ হিসেবে ব্রিটেন অনুমোদন দিয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেওয়া কথা ভাবছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে— চীনের ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি আসলে কত দূর?
China vaccine
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম দেশ হিসেবে ব্রিটেন অনুমোদন দিয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেওয়া কথা ভাবছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে— চীনের ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি আসলে কত দূর?

আজ বৃহস্পতিবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক গবেষণায় এগিয়ে থাকার পরও এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জরুরিভিত্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও চীনের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাকসিনের ট্রায়াল সম্পর্কিত চূড়ান্ত ডাটা এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি।

এই প্রেক্ষাপটে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন কবে নাগাদ অনুমোদন পেতে পারে সে সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে কিছু বলা হয়নি।

ভ্যাকসিন প্রতিযোগিতায় চীন কি তাহলে পিছিয়ে পড়লো?

যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ ফেলো হুয়াং ইয়ানঝং গণমাধ্যমটিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় হয়তো সেখানকার গবেষকরা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কিত ট্রায়ালের ডাটা অন্যদের চেয়ে দ্রুত সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

তার মতে, তিন ধাপের ট্রায়ালে বিজ্ঞানীরা স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে সংক্রমণের হার তুলনা করে দ্রুত ডাটা নিতে পেরেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘চীনের জন্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং যেটা হয়েছে তা হলো যে কয়েকটি দেশ চীনের ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালিয়েছে সেখানে (স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে) সংক্রমণের হার প্রত্যাশার চেয়ে খুবই কম ছিল। এটিই এখন তার জন্যে হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এ ক্ষেত্রে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চীনের সিনোফার্মের ব্যাপক আকারের ট্রায়ালের উদাহরণও টেনেছেন।

প্রতিবেদন মতে, ফাইজার-বায়োএনটেক যখন জানালো যে তাদের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার অনেক, এর একদিন পর অর্থাৎ গত ১১ নভেম্বর সিনোফার্ম এক বার্তায় জানিয়েছিল যে তাদের ট্রায়াল শিগগিরই শেষ হচ্ছে। কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি জানাল যে তারা ‘প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ডাটা’ উপস্থাপন করবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক জানিয়েছিল, তাদের হাতে ট্রায়াল সম্পর্কিত যথেষ্ঠ ডাটা রয়েছে এবং তা এই সপ্তাহে প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রাজিলে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের কাজ করছে।

গত মাসে ইন্দোনেশিয়া ঘোষণা দিয়েছিল, তারা এ বছরেই চীনের ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমতি দিবে না। ব্রাজিল থেকে ট্রায়াল সম্পর্কিত কোনো ডাটা না আসাকে ইন্দোনেশিয়া কারণ হিসেবে দেখিয়েছে।

চীনের ভ্যাকসিন কূটনীতির জন্যে এই উদ্ভাবনগুলো খুবই প্রয়োজন ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হুয়াংয়ের মতে, অন্য গবেষকরা যখন ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ডাটা প্রকাশ করছিলেন তখন তা চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল। কেননা, চীন অন্য দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মহাপ্রাচীরের দেশটি এখনও চূড়ান্ত ট্রায়ালের ডাটার জন্যেই অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেছেন, ‘এটা অস্বীকার করা যাবে না যে ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতিযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। চীন যখন ভ্যাকসিন উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছিল তখন তারাই যে প্রথম সফল ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশ হবে সেই উচ্চাশা প্রকাশ করে ফেলেছিল।’

চীন বিষয়টিকে ‘জাতীয় গৌরব’ হিসেবে দেখেছিল বলেও মন্তব্য করেছেন হুয়াং।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইজার ও মডার্না যখন তাদের ভ্যাকসিনের ফল প্রকাশ করল এর কয়েকদিন পর চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হলো, সিনোফার্ম শর্তসাপেক্ষে দুটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়ার জন্যে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চীনের কর্তৃপক্ষও জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্যে সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের দুটি ওষুধকে চূড়ান্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কয়েক মাস আগেই ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। সেই মোতাবেক প্রায় ১০ লাখ মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে সেই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল।

ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে যে ভ্যাকসিনগুলো উন্নয়ন করা হয়েছে তা চীনের উন্নয়নকৃত ভ্যাকসিনের আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জেরোমি কিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যদি কোনো দেশের জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভ্যাকসিন অনুমোদনের ক্ষেত্রে কঠোর মনে না হয়, আর সে রকম একটি দেশ থেকে যদি ভ্যাকসিন অনুমোদনের প্রস্তাব আসে তাহলে সে সব ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন জাগবে। অর্থাৎ, সে সব ভ্যাকসিন বিবেচনায় নিতে একটু দেরি হবে।’

চীনের দাবি, তারা যে লাখ লাখ মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দিয়েছে তাদের অনেককেই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং তাদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। এটিকে তারা তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার একটি প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে।

এ বিষয়ে কিমের মত, ‘তারা চীনের উদ্ভাবিত পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন নিয়েছেন কারণ তাদের দেশের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন। এটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের কোনো অংশ নয়। এর দ্বারা তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও প্রমাণিত হয় না।’

সাংহাই-ভিত্তিক ভ্যাকসিন গবেষক তাও লিনা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার ক্ষেত্রে চীন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘সাধারণত ভ্যাকসিনগুলোকে দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হবে। যা ফাইজার ও মডার্নার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু, চীনের পক্ষে সেই তাপমাত্রা বজায় রেখে ভ্যাকসিন বিদেশে পাঠানো সম্ভব।’

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ১০০ কোটি ডোজ দেওয়ার প্রতীজ্ঞা করেছে। ২০২১ সালের মধ্যেই অন্তত ৪০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে।

তবে গবেষক তাও লিনা মনে করেন, ‘চীন তার নিজ দেশের মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়ার আগেই অন্য দেশে ভ্যাকসিন পাঠাতে পারলে বেশি খুশি হবে।’

এত আলোচনার পরও প্রশ্ন থেকে যায়— কবে আসবে চীনের ভ্যাকসিন?

আরও পড়ুন:

অনুমোদন পেল ফাইজারের ভ্যাকসিন

‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পেতে কমপক্ষে আরও ২-৩ মাস সময় লাগবে’

ভারতের সঙ্গে ভ্যাকসিন বিষয়ে আলোচনা চলছে: ফাইজার

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

54m ago