পেঁয়াজের বীজ সংকটে দিশেহারা কৃষক
পেঁয়াজের বীজ সংকট আর আকাশচুম্বী দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ভরা মৌসুমেও এবার মানসম্মত বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিক খরচ। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, এবার উৎপাদন খরচ বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হতে পারে।
তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় এই সংকট তীব্রতর হয়েছে। বীজ সংকটের সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও ফড়িয়ারা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর দেশের বেশ কিছু জেলায় কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যে কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
এর মধ্যেই দুই দশমিক পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মো. রাশেদ ইফতেখার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এ বছর এক দশমিক ৮৫ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ এবং ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজ (মূলকাটা) চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর যে বীজ এক হাজার থেকে ১২ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এ বছর সেই বীজের দাম বেড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা কেজি হয়েছে।
পাবনার সুজানগর উপজেলার মঠপারা গ্রামের কৃষক কাওসার মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত বছর ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ভালো দাম পেয়েছিলাম। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। ১০ বিঘা জমিতে চাষ করতে ১০ কেজি বীজ প্রয়োজন। গত সপ্তাহে রাজশাহী থেকে সাত হাজার টাকা কেজি দরে চার কেজি বীজ কিনেছি। চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বীজতলা শেষ করতে না পারলে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।’
বিএডিসি বীজ বিপণন ব্যবস্থাপক আবু রায়হান তারেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতিবছর কৃষকদের কাছে কিছু বীজ বিক্রি করা হয়। তাতে চাহিদা পূরণ না হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ বছর বিএডিসি বীজ সংরক্ষণ করতে পারেনি। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত বছর বিএডিসি পাঁচ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজের সরবরাহ করতে পেরেছিল। এ বছর বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কৃষি বিভাগ সব বীজ নিয়ে গেছে।’
সুজানগর উপজেলার মানিকহাট গ্রামের কৃষক জোয়াদুল ইসলাম মন্টু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে।’
পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে কৃষি বিভাগও সংশয়ে রয়েছে। সংকট মোকাবিলায় কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ বছর ২১টি জেলায় প্রায় ৫০ হাজার কৃষকের মধ্যে পেঁয়াজের বীজ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেরক কৃষককে ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজের বীজ দেওয়া হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় অধিকাংশ কৃষক পেঁয়াজ বাজারজাত করে ফেলেছেন। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এই সুযোগ নিচ্ছে। ফলে বীজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বাজারে যে বীজ পাওয়া যাচ্ছে তার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে পূর্বপ্রস্তুতি রাখা হবে।’
Comments