জিকোর নৈপুণ্যের পরও বাংলাদেশের বড় হার
শক্তি, দক্ষতা, অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা কাতারের মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলাতে দিশেহারা থাকল বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ধসে পড়ল রক্ষণভাগ, দেখা মিলল ভুল পাসের ছড়াছড়ি। একের পর এক সেভ করে আলাদা করে অবশ্য নজর কাড়লেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। তারপরও বিশ্বকাপ আয়োজকদের বিপক্ষে বড় হার এড়াতে পারল না জেমি ডের দল।
২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে কাতার। দুদলের আগের দেখায় ঘরের মাঠ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কাতারের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা।
শুক্রবার দোহার আব্দুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই বাংলাদেশকে চেপে ধরে স্বাগতিকরা। গোটা ম্যাচেই খেলা চলে অতিথিদের অর্ধে। সবমিলিয়ে ২৮টি সুযোগ তৈরি করে কাতার। তাদের নেওয়া শটগুলোর ১৫টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, কাতারের গোলরক্ষককে একবারের জন্যও পরীক্ষা দিতে হয়নি।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশ বেছে নিয়েছিল রক্ষণাত্মক কৌশল। ৪-৫-১ ফরমেশনে একাদশ মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ ডে। তারপরও কাতারের ফুটবলাররা প্রচুর ফাঁকা জায়গা বের করে আক্রমণে ওঠেন। তাদের শারীরিক সামর্থ্য ও কৌশলগত দক্ষতার কোনো জবাব যেন জানা ছিল না বাংলাদেশের! যা লড়াই করার একাই করেন জিকো। নইলে হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। মোট দশটি সেভ করেন তিনি।
চতুর্থ মিনিটেই পিছিয়ে পড়তে পারত সফরকারীরা। বামপ্রান্ত থেকে আকরাম আফিফের ক্রসে ফরোয়ার্ড আহমেদ আলালদিনের হেড বাংলাদেশের ডিফেন্ডার তপু বর্মণের পায়ে লেগে বাধা পায় পোস্টে।
আক্রমণের ধারা বজায় রেখে নবম মিনিটে এগিয়ে যায় কাতার। আবদেলকারিম হাসানের পাসে ডি-বক্সের ভেতর থেকে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন মিডফিল্ডার আবদুলাজিজ হাতেম।
দুই মিনিট পর দারুণ একটি সেভ করে ব্যবধান বাড়তে দেননি জিকো। আলালদিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন তিনি। ২১তম মিনিটে হাতেমের ফ্রি-কিকে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারেননি ডিফেন্ডার হাসান। ছয় মিনিট পর আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় তাদের। আফিফের পাসে হাসানের বাম পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
ম্যাচে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মুহূর্তটি আসে ২৮তম মিনিটে। কর্নার আদায় করে নিলেও তা থেকে অবশ্য সুযোগ তৈরি করতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
৩২তম মিনিটে ফের বাংলাদেশকে রক্ষা করেন জিকো। আফিফের শট দারুণ দক্ষতায় পা দিয়ে ফেরান তিনি। তবে পরের মিনিটেই ব্যবধান বাড়ায় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৫৯তম স্থানে থাকা দলটি। ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে ডান পায়ের কোণাকুণি শটে জাল কাঁপান ফরোয়ার্ড আফিফ।
৪০তম মিনিটে আলালদিনের শট সহজেই লুফে নেন জিকো। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় কাতার। তবে অধিনায়ক হাসান আল হাইদোসের শট চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
বিরতির পরও দেখা যায় একই চিত্র। কাতারের আক্রমণভাগ থেকে শুরু করে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা জিকোর পরীক্ষা নেন। আর তাতে বারবার উতরে যান তিনি। তবুও শেষরক্ষা হয়নি। আরও তিনটি গোল হজম করতে হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা এই গোলরক্ষককে।
৭০তম মিনিটে স্পট-কিক থেকে স্কোরলাইন ৩-০ করেন স্ট্রাইকার আলমোয়েজ আলী। জিকো সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও ফেরাতে পারেননি। বদলি নামা বিপলু আহমেদ ডি-বক্সে মোয়ায়েদ হাসানকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
ছয় মিনিট পর ফের জালের ঠিকানা খুঁজে নেন প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ থাকা আলমোয়েজ। হাতেমের ক্রসে হেড করে ফাঁকা জালে বল পাঠান তিনি। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন আফিফ। ম্যাচসেরা এই খেলোয়াড় কোণাকুণি শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন।
ছয় ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে কাতার। এক ম্যাচ কম খেলে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
Comments