যেভাবে পদ্মায় ৩০০ যাত্রীকে রক্ষা করলেন ফেরি চালক

ফেরির নাম রানীগঞ্জ। নিজস্ব কোন ইঞ্জিন নেই। ইঞ্জিন আছে এমন একটি জাহাজ এ ফেরিটিকে নিয়ে যায়। তাই 'ঠেলা' ফেরি নামেই বেশি পরিচিত। গত রবিবার রাত ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে একটি ড্রেজারের পাইপের ধাক্কায় তলা ফেটে যায় ফেরিটির। তাৎক্ষণিক ২৬ জন স্টাফ লেপ, তোশক, বালিশ, বস্তা দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করেন এবং চালক দ্রুতগতিতে ফেরিটিকে ঘাটে নিয়ে যান। ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মার চরেও ভেড়ানো যাচ্ছিল না ফেরিটিকে।
ড্রেজারের পাইপের ধাক্কায় রানীগঞ্জ ফেরিটির তলা ফেটে যায়। চালকের দক্ষতায় রক্ষা পায় ৩০০ যাত্রী। গতকাল সোমবার ঘাটের কাছে ফেরিটি ডুবে যায়। ছবি: সংগৃহীত

ফেরির নাম রানীগঞ্জ। নিজস্ব কোন ইঞ্জিন নেই। ইঞ্জিন আছে এমন একটি জাহাজ এ ফেরিটিকে নিয়ে যায়। তাই 'ঠেলা' ফেরি নামেই বেশি পরিচিত। গত রবিবার রাত ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে একটি ড্রেজারের পাইপের ধাক্কায় তলা ফেটে যায় ফেরিটির। তাৎক্ষণিক ২৬ জন স্টাফ লেপ, তোশক, বালিশ, বস্তা দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করেন এবং চালক দ্রুতগতিতে ফেরিটিকে ঘাটে নিয়ে যান। ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মার চরেও ভেড়ানো যাচ্ছিল না ফেরিটিকে।

আর মাত্র কয়েক মিনিট অবস্থান করলে ফেরিটি পদ্মায় ডুবে যেত। চালক ও কর্মীদের সাহসিকতা আর দক্ষতায় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় ১৯টি যানবাহনের ৩০০ যাত্রী। তবে যাত্রীদের কাউকেই বুঝতে দেওয়া হয়নি চরম এই বিপদের কথা। 

সেদিন রাত ১০ টায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৭টি ট্রাক, ৫টি বাস, ৭টি ছোট গাড়ি বহন করেছিল রানীগঞ্জ ফেরি। আর ইঞ্জিনচালিত জাহাজ আইটি-৯৬ এর মাস্টার ছিলেন মো. ফজলুল করিম। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে তিনি প্রায় আট বছর যাবত কাজ করছেন। কর্মজীবনে এমন পরিস্থিতি আগে কখনও আসেনি।  

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, হাজরা নামক এলাকায় পদ্মাসেতুর নদীশাসনের কাজ চলছে। সেখানে চীনের সিনোহাইড্রো কোম্পানির ড্রেজার অতিক্রমের সময় হঠাৎ ড্রেজারের একটি পাইপ পানিতে ভেসে ওঠে। এর সঙ্গে ধাক্কা লাগে ফেরির তলার অংশের। হালকা একটা শব্দ হয়। যাত্রীরা যারা ছিলেন তারাও বুঝতে পারেননি কারণ শব্দ তেমন জোরালো ছিল না, ধাক্কাও ছিল হালকা। ইঞ্জিন বন্ধ করে গিয়ে দেখি ফ্লাডের ডান পাশে পিছনের অংশ থেকে পানি বের হচ্ছে তীব্র গতিতে। যা আনুমানিক এক ফুটের বেশি জায়গা জুড়ে। তাৎক্ষণিক কম্বল, বালিশসহ আশেপাশে যা কিছু ছিল তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করি। তবে পানি বের হচ্ছিল কম, ঢুকছিল বেশি।

‘স্টাফদের পানি রোধের দায়িত্ব দিয়ে দ্রুত গতিতে ফেরিটিকে চালিয়ে নিয়ে যাই। মাঝে মাঝে সহকারী চালককে দায়িত্ব দিয়ে আমিও পানি নিষ্কাশনে সহযোগিতা করি। এরপর ইঞ্জিনের গতি বাড়িয়ে ফেরিটিকে দ্রুত গতিতে বাংলাবাজার ঘাটে নিয়ে যাই। ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে একটি ঘাট দ্রুত ফেরি ভেড়ানোর জন্য তৈরি রাখতে বলেছিলাম। এরপর নিরাপদে দ্রুত ঘাটে যানবাহন, যাত্রী আনলোড করি। তখন পদ্মায় অনেক ঘন কুয়াশা ছিল। সেখানে অনেক নির্দেশনা ঠিকঠাক কাজে লাগানো যাচ্ছিল না,’ বলেন ফজলুল করিম।  

তিনি জানান, যানবাহন আনলোডের পর সাবমারসিবল পাম্প এনে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা, ঘাট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পানি অপসারণের চেষ্টাও করেছিল। পরদিন সকালে ফেরিটি ঘাটের কাছে ডুবে যায়। 

তিনি বলেন, ঘাটে পৌঁছানোর ২০ মিনিট আগে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে কয়েক মিনিট বেশি সময় থাকলেই যানবাহন নিয়ে ফেরিটি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। ৭-৮ মাস আগে ফেরিটিকে মেরামত করে আনা হয়েছিল। ফেরিটির কোন সমস্যা ছিল না। ফিটনেসসহ সবকিছু ভালোই ছিল। স্বাভাবিক সময়ে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাট পৌঁছাতে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় লাগে। রাণীগঞ্জ ফেরিটিরও একই সময় লেগেছিল। এ ঘটনায় শিবচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ কাজের পর ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ সবাই আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। সরকার থেকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে। 

শিমুলিয়াঘাটের মেরিন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ জানান, ফজলুল করিম একজন অভিজ্ঞ মাস্টার। ওই সময়ে দক্ষতা আর সাহসিকতার পরিচয় না দিলে যাত্রী ও যানবাহনের ক্ষতি হতো। যাত্রীদের বুঝতে না দিয়ে পানি রোধের চেষ্টার পাশাপাশি ফেরিটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এটিই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত ছিল। ফেরিটিকে পাশের পদ্মার চরেও নেওয়া যাচ্ছিল না, কেননা তখন ঘন কুয়াশা ছিল। ভালোভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তার বুদ্ধিমত্তার কারণেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। যদি অদক্ষ চালক এই জায়গায় থাকত তবে জাহাজটি ডুবে যেত।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago