সমাজের সর্বস্তরে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, সরকার সমাজের সর্বস্তরে নারীদের সমান অংশ গ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে তারা সাহসিকতার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তাদের অবদান রাখতে পারে। বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, সরকার সমাজের সর্বস্তরে নারীদের সমান অংশ গ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে তারা সাহসিকতার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তাদের অবদান রাখতে পারে। বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীর উন্নয়ন ছাড়া একটি সমাজ কখনোই এগোতে পারে না। কারণ, সমাজের অর্ধেক নারী। আর যদি নারীরা নিজেদের সমানভাবে গড়ে তুলতে না পারে, তবে এই সমাজ কীভাবে গড়ে উঠবে?’

সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে সে সমাজের নিজের পায়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পরপরই সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখার মতো নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আর এ জন্যই বাংলাদেশে আজ নারীর ক্ষমতায়নে এই ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ নারীদের উদ্যোক্তা করার পাশাপাশি তাদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যাতে তারা সাহসিকতার সঙ্গে সমাজে তাদের স্থান করে নিতে পারে।

তিনি বলেন, সরকার সব সময় দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে চায়। আর এ জন্যই সরকার নারী শিক্ষা ও তাদের কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

নারীদের কর্মসংস্থানের ফলে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আসে এবং ফলশ্রুতিতে দেশ দারিদ্রমুক্ত হয়, তাই এটা সমাজের জন্য ভালো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব ধরনের চাকরিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানটিতে যোগ দেন। বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। নারী ও শিশু বিষয়ক সচিব কাজী রওশন আখতার এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

এর আগে, শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, নারীদের পেশাগত উন্নয়নে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমা বেগম, নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বেগম মুশতারী শফি এবং নারী অধিকার ক্যাটাগরিতে ফরিদা আক্তার এই মর্যাদাপূর্ণ পদক গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এই পদকগুলো হস্তান্তর করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর সংবিধানে নারীর অধিকার এবং নারী নেতৃত্বের বিকাশে সংসদে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করেছিলেন।

এ ছাড়াও, জাতির পিতা স্বাধীনতার পরে নারীদের সরকারি চাকরিতে গ্রতিযোগিতার সুযোগ দিতে আইন পরিবর্তন করেছিলেন, যা পাকিস্তান আমলে সম্ভব ছিল না।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে তিনি উচ্চ আদালতে নারী বিচারক নিয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং নারীর ক্ষমতায়ণ নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো সরকারের সচিব পদে নারীদের পদোন্নতি দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, তার সরকার আইনি সহায়তা সেবা চালু করেছে যাতে নারীরা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা ও ন্যায়বিচার পায়, এছাড়াও তার সরকার বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা এবং স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছেন যাতে তারা আর্থিকভাবে নিজেদের স্বাবলম্বী রাখতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারাদেশে এমনকি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের থাকার জন্য হোস্টেল নির্মাণ করছে। এর ফলে তারা সুরক্ষিত স্থানে থেকে তাদের চাকরি করে যেতে সক্ষম হবেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এই সামাজিক সমস্যাগুলো বন্ধ করতে ইতোমধ্যে নারী সহায়তা কেন্দ্র ১০৯ এবং জাতীয় কল সেন্টার ৯৯৯ এর মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে, এতে যে কোনো ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করতে এবং গ্রেপ্তারে সহায়ক হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে নারীরা এখন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন এবং তারা এখন প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সশস্ত্রবাহিনী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চতর পদে কাজ করছেন।

‘বাংলাদেশে সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা সকলেই নারী, বিশ্বে এটি অনন্য দৃষ্টান্ত’ এ কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদেশেও এ বিষয়টি নিয়মিত প্রশংসিত হচ্ছে।

বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মহান নারী সঠিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো দেখতে চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়ার জন্মদিনে আমার মেয়ে সায়মা হোসেনও জন্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি সায়মার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

তিনি বলেন, সায়মা হোসেন ভিন্নভাবে সক্ষম এবং সমাজে উপেক্ষিত অটিস্টিক ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করছেন। তবে এ ব্যাপারে এখন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে এবং তার উদ্যোগে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ভিন্নভাবে সক্ষম এবং অটিস্টিক ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে দেশবাসীকে পুনর্বার যথাযথ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago