ভারতে ডেটার অভাবে আটকে আছে ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন

সুর্নিদিষ্ট ডেটা নেই, ভ্যাকসিন পেতে অপেক্ষা করতে হবে ভারতীয়দের
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে ভারতকে আরও অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)।

গতকাল বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ডিসিজিআই’র একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এখনো জরুরি ব্যবহারের জন্য সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন দেয়নি।

জরুরি অনুমোদনের জন্য ভ্যাকসিন দুটির ডেটা এখনো যাচাই-বাছাই চলছে বলেও সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।

‘সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি’ নামে পরিচিত ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, পেডিয়াট্রিক্স ও পালমোনারি মেডিসিনসহ একাধিক শাখার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।

কমিটিটি পর্যায়ক্রমে নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিনের অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের প্রস্তাব পেয়ে থাকে।

এসআইআই’র কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কথা উল্লেখ করে কমিটি গতকাল জানিয়েছে, ‘অনুমোদন পেতে হলে ফার্মগুলোকে দেশের দ্বিতীয়/ তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সুরক্ষা তথ্য, যুক্তরাজ্য ও ভারতের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ইমিউনোজনিসিটি ডেটা ও ইউকে-এমএইচআরএ’র (ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক কমিটি) মূল্যায়নের ফলাফল জমা দিতে হবে।’

ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে কমিটি জানিয়েছে, কোভাক্সিন নিয়ে ভারত বায়োটেক যেসব ডেটা উপস্থাপন করেছে সেক্ষেত্রেও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষে ডেটাগুলোর মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘কোনো সংস্থাই তাদের চলমান তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল থেকে সম্পূর্ণ ডেটা উপস্থাপন করেনি। গত মাসে চেন্নাইয়ের এক স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। তিনি পরে এসআইআইয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। আমরা ওই স্বেচ্ছাসেবীর ব্যাপারে আরও তথ্য চেয়েছিলাম।’

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এক স্বেচ্ছাসেবীর ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মারাত্মক শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এসআইআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। তবে, এসআইআই এটি অস্বীকার করেছে এবং আবেদনকারীকে পাল্টা মামলা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিক’ তদন্তে দেখা গেছে যে, ভ্যাকসিনের কারণে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। তবে, এখনও সরকারের পক্ষ থেকে এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

ভারতের আইনে ভারতীয়দের ওপর পরীক্ষা ছাড়াই কোনো সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বা ওষুধের বাণিজ্যিকভাবে অনুমোদন পেতে পারে, যদি সেটি অন্য কোনো দেশে অনুমোদন পেয়ে থাকে।

এই জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত কমিটির সদস্যদের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে। তারা কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে ন্যূনতম বা বিস্তারিত প্রমাণ চাইতে পারেন।

সূত্রের বরাতে দ্য হিন্দু  আরও জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেক- যাদের তৈরি ভ্যাকসিন ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য ও বাহরাইনে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে তারা এসআইআই কিংবা ভারত বায়োটেকের আগেই ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদের কাছে অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিল। কমিটির কাছে তারা শিগগিরই ডেটা উপস্থাপন করবে বলেও জানা গেছে।

এসআইআই ভারতে ১ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছে। ভারত বায়োটেক ভারতজুড়ে ২৮ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর তাদের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করেছে।

এসআইআইয়ের ভ্যাকসিন জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য এখনও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অন্য কোনো দেশে নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন পায়নি।

এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যদি ওই দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক কমিটি ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেয় তবে আমরা ভারতে এটির অনুমোদনের জন্য ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করব। তবে এখন আমাদের কাছে কোনো বিশ্বাসযোগ্য ডেটা নেই। এমনকি, ভারতে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়েও সুর্নিদিষ্ট ডেটা এখনও হাতে আসেনি।’

এছাড়াও, পুনে-ভিত্তিক জেনোভা বায়োফার্মার তৈরি এম-আরএনএ ভ্যাকসিনের মানবদেহে ট্রায়াল শুরু করার অনুমতি দিয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রক কমিটি।

গতকাল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এসআইআই ও ভারত বায়োটেকের আবেদন ‘প্রত্যাখ্যান’ করা হয়েছে— এমন সংবাদকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘ভুয়া সংবাদ’ বলে মন্তব্য করেছে। তবে এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

ভারত সরকার ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটির ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার আশা করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Four of a family killed in Sylhet hillock collapse

The incident occurred around 2:00am in Bakhtiarghat area under Lakshanaband Union of Golapganj upazila

20m ago