পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো সম্পন্ন

পদ্মা সেতুতে ৪১তম স্প্যানটি বসানো হয়েছে। ছবি: স্টার

অবশেষে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ অর্থাৎ ৪১তম স্প্যান বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো ছয় হাজার ১৫০ মিটারের পুরো সেতু। সংযোগ হলো মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত। ৪০তম স্প্যান বসানোর ছয়দিনের মাথায় এ স্প্যানটি বসানো হয়েছে।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর  নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের। তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ২ মিনিটের দিকে সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল নদীতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে অবস্থিত ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ৪১তম স্প্যান ‘টু-এফ’।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুতে বসে প্রথম স্প্যানটি। এরপর ২০১৮ সালে বসানো হয় চারটি স্প্যান, ২০১৯ সালে ১৪টি, ২০২০ সালে বসানো হয় ২২টি স্প্যান। প্রথম স্প্যান থেকে ধারাবাহিকভাবে বসিয়ে শেষ পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে ৩৮ মাস ১০ দিন।

কাজের গতি এগিয়ে রাখতে একদিন আগে থেকেই ৪১তম স্প্যানটিকে নির্ধারিত পিলারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল বিকেল ৫টা ৫ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটিকে বহন করে নিয়ে যায় তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেন। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে ১৫০ মিটারের ধূসর স্প্যানটি নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছালে সেখানে ভাসমান ক্রেনের নোঙর করার কাজটিও সেরে ফেলেন প্রকৌশলী, শ্রমিকরা। সারারাত সেখানেই রাখা হয় স্প্যানবহনকারী ক্রেনটিকে।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা নদীতে ঘন কুয়াশার উপস্থিতির মধ্যেও শুরু হয় স্প্যান বসানোর কার্যক্রম। সকালে স্প্যানটিকে দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে নোঙর করার কাজটি করা হয়। এরপর পিলারের উচ্চতায় তোলা হয় স্প্যানটিকে। তারপর রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর।

সূত্র আরও জানায়, শেষ স্প্যান বসানোর হচ্ছে বলে দুই পাশে ছিল বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় পতাকা। পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি ও চীনা ভাষায় লিখা— ‘বহু বছরের প্রচেষ্টায় দেশি-বিদেশি শ্রম শক্তির মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের পথে। সেতুর ৪১টি ইস্পাতের তৈরি স্প্যান সোনার বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলকে সংযুক্তির মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের বন্ধনকে অটুট রাখবে।’

পদ্মা সেতুতে ৪১তম স্প্যান বসানো হচ্ছে। ছবি: তুহিন শুভ্র অধিকারী

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। এরপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ধাপে ধাপে স্প্যান বসতে থাকে। সেতুর কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, শ্রমিকরাও শেষ স্প্যান বসিয়ে খুশি। চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে চার মাস স্প্যান বসানো হয়নি। কিন্তু, গেল দুই মাসে আটটি স্প্যান বসানো হয় এবং এ মাসে বসে দুইটি স্প্যান। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এ ছাড়া, দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানো হচ্ছে।

ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

আরও পড়ুন:

পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যান বসানোর কাজ চলছে

শেষ স্প্যান প্রস্তুত, বসানো হতে পারে আগামীকাল

পদ্মা সেতুর ৬ কিলোমিটার দৃশ্যমান

Comments

The Daily Star  | English

Manu Mia, who dug thousands of graves without pay, passes away

He had been digging graves for 50 years and never accepted any payment for his service

52m ago